বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বাস, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ততই বাড়ছে বাস ও ট্রেনে নাশকতার ঘটনা। গত মঙ্গলবার আগুন দেয়া হয় ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে। তিনটি বগিতে লাগা আগুনে মারা যান মা ও শিশুসহ চার জন।
একইদিন চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী আন্তঃনগর মেঘনা ট্রেনের একটি বগিতে পাথর নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় ট্রেনের একটি বগির গ্লাস ভেঙে গেছে। এর আগে, ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় ভোর সোয়া ৪টার দিকে ঢাকাগামী ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় একজন নিহত হন।
এছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে অগ্নিসংযোগের বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ৩০০টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উঠে আসে বাস ও ট্রেনে আগুন সন্ত্রাসের বিষয়টি। এ বিষয়ে বৈশ্বিক সংস্থাটির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। এ সময় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নাশকতায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সেই ভয়ংকর আগুনে নিহতদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রশাসনের দায়িত্ব ঘটনার তদন্ত করা এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।’
আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেফতারের পরও জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে কি না – তা জানতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী। এ সময় তাকে থামিয়ে দেন স্টিফেন ডুজারিক। সাফ জানান, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষেই অবস্থান জাতিসংঘের।
তিনি বলেন, ‘মুশফিক, আমি আগেও আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানাই, যেখানে মানুষ কোন হুমকি ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। আমাদের অবস্থান আগের মতই আছে।’
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে সরকার। নির্বাচন কমিশনও বলছে, নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির নানা তৎপরতা সত্ত্বেও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতিসংঘ।