পাকিস্তানে চলছে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭ হাজারেরও বেশি প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার ভোট দিচ্ছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিকার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ।
বৈশ্বিক নানা মিডিয়া ও থিংক-ট্যাংক বলছে, পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনে জিততে চলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তবে এই অনুমান সঠিক হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজের এটি হবে চতুর্থ মেয়াদ।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রধান নেতা নওয়াজ শরিফ ২০২৪ সালের এই সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হবেন বলে মার্কিন মিডিয়া এবং থিংক ট্যাংকগুলোর পাশাপাশি বিবিসি, গার্ডিয়ান এবং এএফপিসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটগুলো অনুমান করছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নওয়াজ শরীফের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। তিনি এর আগে তিনবারই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। গত বছর ‘স্বেচ্ছা নির্বাসন’ থেকে ফিরে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলাগুলো থেকে নিজেকে রেহাইয়ের সুযোগ পান। সর্বশেষ তিনি ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্র নীতির ফেলো মাদিহা আফজালের মতে, নওয়াজ শরিফ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। একটি হলো- ‘পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি’। অন্যটি হচ্ছে- ‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে ঠিকঠাকভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করা।’
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে এগিয়ে ছিলেন ইমরান খানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুনরায় নির্বাচিত হতে চাইছেন এবং তেমনটি হলে বিদেশে কয়েক বছরের স্বেচ্ছা-নির্বাসনের পর এটি হবে নওয়াজের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন।’
বার্তাসংস্থা এপি রিপোর্ট করেছে, ‘গত বছরের অক্টোবরে দেশে ফেরার পর আদালত তার দোষী সাব্যস্ত এবং কারাদণ্ডের রায় বাতিল করার পর চতুর্থ মেয়াদে শরিফের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পরিষ্কার পথ রয়েছে। তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খান এখন কারাগারে থাকায় কার্যত ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই এবারও একই ধরনের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেসময় নওয়াজ শরিফ আইনি বেড়াজালের সাথে লড়াই করছিলেন এবং নির্বাচনে জিতে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর এবার ইমরান খান কারাগারে থাকায় বিশ্লেষকরা নওয়াজ শরিফের আরেকটি জয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে কে আসলে বিজয়ী হবেন তা স্পষ্ট না হলেও এটি নির্ধারণে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর জেনারেলরা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। আর ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের ও ১০টি আসন অমুসলিম প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। সরকার গঠন করতে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ১৬৯টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।