অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা নিয়ে গতকাল পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে ধারণা করা হয়েছিল— ইমরানের দল পিটিআইয়ের ভরাডুবি হবে। আর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ-এন।তবে নির্বাচন শেষে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচন করা পিটিআই প্রার্থীরা অন্য দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।
আর প্রাথমিক ফলাফল পাওয়ার পর পিটিআই জানিয়েছে, এবার তারা এককভাবে সরকার গঠন করবে। সরকার গঠনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে তাদের জোট গঠন করতে হবে না।
তবে পিছিয়ে থাকা নওয়াজ শরীফের দল জানিয়েছে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তারাই সরকার গঠন করবে।
পাকিস্তানের সংবিধানে রয়েছে, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন; তাদের নির্বাচিত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো দলে যোগ দিতে হবে। নয়ত তাদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।
তবে গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের পূর্ণ ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পিটিআই দাবি করছে, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশিরভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর; সেগুলোর ফলাফল পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। আর এ কারণে ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হচ্ছে না।
পিটিআই তাদের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে, পূর্ণ ফলাফল পেতে তারা যেন আঞ্চলিক অফিসের (পিও) সামনে অবস্থান নেয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন জায়গার পিও অফিসের সামনে জড়ো হয়েছেন পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা। তারা ফলাফল না নিয়ে পিও অফিসের সামনে থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন।
পাক সংবাদমাধ্যম জিও টিভি তাদের সর্বশেষ আপডেটে ১৩৯টি আসনের ফলাফল প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে— পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫৭টি আসনে জয় পেয়েছেন। নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ পেয়েছে ৪২টি আসন। বিলওয়াল ভুট্টোর পিপিপি পেয়েছে ৪৩টি আসন। এমকিউএম-পি পেয়েছে চারটি আসন। জুল-এফ পেয়েছে একটি আসন। আর অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে একটি আসন। এতে দেখা যাচ্ছে, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা অনেক এগিয়ে আছে।
পাকিস্তানে গতকাল জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে ভোটাভুটি হয়েছে। জাতীয় পরিষদে মোট আসন হলো ৩৩৬টি। ২৬৬টিতে ভোট হলেও বাকি আসনগুলো নারী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংরক্ষিত।
কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায়— তাহলে সংরক্ষিত সহ মোট ১৭২টি আসন পেতে হবে। সে হিসেবে যদি পিটিআই এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে তাদের নির্বাচন হওয়া আসনগুলো থেকে অন্তত ১৫০টি আসনে জয় পেতে হবে।
পিটিআই গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছিল, তারা ১৫০টি আসনে এগিয়ে আছে। তবে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, মুসলিম লীগ-এনের সঙ্গে তাদের প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
যেহেতু কোনো দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না— সেক্ষেত্রে পাকিস্তানে জোট সরকার আসতে পারে। এক্ষেত্রে পিটিআই অন্যদের সঙ্গে জোট গঠন করতে পারে। কিন্তু আবার যদি অপরদিকে মুসলিম লীগ-এন, পিপিপি ও অন্যান্য দলগুলো জোট গঠন করে তাহলে তারাও ক্ষমতায় আসতে পারে।
সূত্র: জিও টিভি, দ্য ডন