জাতীয়

তেঁতুলিয়ায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শীতের দেশের টিউলিপ

মোহনা অনলাইন

শীত প্রধান দেশের শোভাবর্ধক টিউলিপ ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। নৈসর্গিক এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসছেন তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায়।

সম্প্রতি তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় দেখা যায়, সূর্যের তাপ নিয়ন্ত্রণে মশারির মতো বিশেষ ছাউনির নিচে বাহারি রঙয়ের সারি সারি টিউলিপ ফুল ফুটে রাজসিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।

শীতপ্রবণ এলাকার ভিনদেশি এই ফুল বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ায় ফুটেছে—এটা শুনেই কৌতূহল ও সৌন্দর্য উপভোগের বাসনা নিয়ে প্রত্যন্ত এই গ্রামে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে ছুঁয়ে দেখছেন, কেউবা ছবি তুলছেন, আবার অনেকেই আপনজনদের সঙ্গে টিউলিপের সৌন্দর্য প্রাণবন্তভাবে ভাগাভাগি করতে ভিডিও ধারণেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বাবা-মায়ের সঙ্গে টিউলিপ বাগানে ঘুরতে এসে আনন্দে বিহ্বল কলেজ শিক্ষার্থী নাতাশা ইব্রাহীম বলেন, ‘এতদিন সিনেমায় ও ইউটিউবে টিউলিপ দেখেছি। সেই অপরূপ সৌন্দর্যের টিউলিপ এখন আমাদের পঞ্চগড়ে। সত্যিই এটা অসাধারণ, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয়দের নিয়ে টিউলিপ বাগানে ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন আশিক। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে ভারতের কাশ্মীরে বিস্তীর্ণ টিউলিপ বাগানের দেখেছি প্রথম। সেই ফুল তেঁতুলিয়ায় হচ্ছে জেনে আত্মীয়দের নিয়ে দেখতে এলাম।’

সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপি; একেকটি টিউলিপ ফুলের বাহারি রঙের ছোঁয়ায় যেন আলপনার সাজ। এ যেন জমিনে একখণ্ড রংধনুর গালিচা! আর নানা রঙের সঙ্গে শীতপ্রধান দেশের এই টিউলিপ তৃতীয়বারের মত রাজসিক সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

বিভিন্ন দেশে ১৫০টিরও বেশি প্রজাতির টিউলিপ চাষ হয়। এর মধ্যে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার বীজ বোনা হয়েছে দর্জীপাড়া গ্রামে। গত বছর লাভের মুখ দেখে নতুন করে তেঁতুলিয়ার মাটিতে এ ফুল নতুন করে চাষ করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক আয়ে ঘুরেছে তাদের সংসারের চাকা।

তেঁতুলিয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের আবহাওয়া আসলে টিউলিপ চাষের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। কিন্তু শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা দিনের বেলায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি এবং রাতের তাপমাত্রা আরও কম থাকে। পঞ্চগড়ে দীর্ঘ সময় শীত থাকায় এখানকার আবহাওয়া টিউলিপ চাষের জন্য সহায়ক। এ কারণেই এখানে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে।’

‘সকালে ও বিকেলে সরাসরি সূর্যালোক ফুলের গুণমান উন্নত করার জন্যও উপকারী। দুপুরে যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন আংশিক ছায়ার জন্য শেড নেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। টিউলিপ চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত জৈব সারসহ রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহার প্রয়োজন’, যোগ করেন তিনি।

পর্যটকদের এই বাড়তি আকর্ষণ দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সম্ভাবনাময় পর্যটনখাতকে বিকশিত করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করবে, যা স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button