নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকমসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে ইউনূস সেন্টার।
রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীনই নয়, হাস্যকর এবং মানহানিকর আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ সংবাদ সম্মেলন করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড—এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল মজিদ অভিযোগ করেছিলেন, গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৪৪৭ কোটি টাকা নিয়েছেন। ইউনূস সেন্টার তা নাকচ করে দিয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ আরও বলেন, পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউনূস সেন্টার বলেছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন অনুযায়ী গঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যাদের পৃথক আইনগত ও হিসাবগত সত্তা রয়েছে। গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন। গ্রামীণ ব্যাংক এখন প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দিতে পারে না। কোম্পানিগুলোর আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো পক্ষ নয় এবং এগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো মালিকানাও নেই।
মানি লন্ডারিংয়ের আলামত পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনূস সেন্টার বলেছে, গ্রামীণ ব্যাংকে বরাবরের মতো দেশের খ্যাতিমান অডিটররা বার্ষিক অডিট করেছেন। তারা কোনো সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক টিম এবং সরকার গঠিত কমিটি ও কমিশন এ ধরনের কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। কাজেই মানি লন্ডারিংয়ের মতো অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীনই শুধু নয়, হাস্যকর এবং মানহানিকরও।
ইউনূস সেন্টার বলেছে, টেলিকম ভবনসহ সবকিছু গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে করা হয়েছে বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে টেলিকম ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা বা কোনো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়নি।
গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন—এমন ভাষ্যের বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠার সময়ে নরওয়ে থেকে ১৯ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড থেকে ৩০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণের নামে ঋণ চুক্তি হয়। যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাই এ বাবদ গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো অর্থ প্রদানের প্রযোজ্যতা নেই।
এ ছাড়া সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড গঠন ও এর দ্বারা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দাতা সংস্থা থেকে প্রদত্ত অর্থের ২ শতাংশ গ্রামীণ কল্যাণকে দেওয়ার ক্ষেত্রে হিসাবসংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তিযুক্ত করার জন্য ৩৪৭ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণের নিজস্ব বুকস অব অ্যাকাউন্টসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বাস্তবে কোনো কোনো রকম আর্থিক লেনদেন হয়নি, যা গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব বইয়ে প্রতিফলিত আছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক তথ্য ধ্বংস করেছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার বলছে, কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া যায়নি বলে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ও সরকার গঠিত কমিটি এমন কোনো পর্যবেক্ষণ দেয়নি। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আনেনি।