স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা শুধু শহর কেন্দ্রিক নয়, এর পরিধি একেবারে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেটাই চান। আমরা স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করেছি।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদেরকে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে কাজ করতে হলে চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধাগুলোও নিয়েও ভাবতে হবে। নার্সদেরকে নিয়ে আমাদের আরো পরিকল্পনা করতে হবে। আজকের এই আয়োজন সরকারের কাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এই প্রোগ্রাম শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, চিকিৎসা প্রশিক্ষণার্থী বিনিময় কর্মসূচির মতো উদ্যোগগুলি শুধু আন্তঃসাংস্কৃতিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করবে না বরং আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সম্মিলিত অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করবে। দেশে এবং দেশের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার জন্য এ ধরনের কর্মকা- সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
আয়োজকরা জানান, সামিট-২০২৪ এ দুই হাজারের অধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। স্পিকার হিসেবে রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ৫০ জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং দেশের ১০০ জনেরও অধিক খ্যাতিমান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। নয় দিনের সম্মেলনে থাকছে ৩০টির বেশি কোর্স এবং সাইন্টিফিক সেশন। দেশে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন শুধু বাংলাদেশেই নয় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
পিএইচএ গ্লোবাল প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ) এর চেয়ারপারসন ডা. তাসবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান, বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের সিইও ডা. মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. এর ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ) এর ট্রাস্টি ডা. নাসির খান।
সভাপতির বক্তব্যে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ) এর চেয়ারপারসন ডা. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেডিক্যাল চিকিৎসার শিক্ষাক্রমে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের মেডিক্যাল শিক্ষা চার থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে রয়েছে। একারণে সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে মিলে কারিকুলাম উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আশাকরি ৪-৫ বছরের মধ্যে একটি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
সম্মেলনে রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস লন্ডন, রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এডিনবার্গ, রয়েল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন, ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন, আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি এর প্রেসিডেন্টবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কৃতরা হলেন- রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ বায়েজিদ সরকার, রংপুর মেডিকেল কলেজের সজিব মিয়া, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের পলাশ হোসেন, পাবনা মেডিকেল কলেজের তাহসিন আহমেদ আলভী, রংপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের মাহবুব আলম।
এদিকে ২০২৩ সালে শিক্ষা, চিকিৎসা শাস্ত্রে, স্বাস্থ্য সেবা তথা জনস্বার্থে বিশেষ অবদানের জন্য ৮ জন চিকিৎসককে অনারারি ফেলোশীপ দিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্। অনারারি ফেলোশীপ পাওয়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকগণ হলেন ডা. সারাহ ক্যাথরিন ক্লার্ক, অধ্যাপক টিমোথি গ্রাহাম, ডা. রানী ঠাকুর, ডা. ফ্রাজ মীর, ডা. রোয়ান বার্নস্টেইন, অধ্যাপক ডেভিড ট্যাগার্ট, ডা. জগৎ নরুলা এবং ডা. সার্জিও লারাচ।