রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দেড় দশক পূর্ণ হলো আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। বহুল আলোচিত পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকরের চূড়ান্ত আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে হওয়া মামলায় এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষী দিয়েছেন ২৫৭ জন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলাটি শুনানি শুরু করা যাচ্ছে না।
সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যরা পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এ মামলার বেশিরভাগ আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম খবর সংযোগকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের লিস্টে- এ মামলার আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছি। শুনানির জন্য আসলে আমরা শুনানি করব। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক না থাকায় এ মামলার শুনানি হচ্ছে না।
অপরদিকে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন খবর সংযোগকে বলেন, এই মামলার আপিল শুনারি জন্য স্পেশাল কোর্ট প্রয়োজন। সেটা হলেই শুনানি শুরু হবে। এখানে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে। সে কারণে তারা আপিল ফাইল করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কাছে সাজা অপর্যাপ্ত মনে হয়েছে। সেজন্য আমরা ক্রিমিনাল পিটিশন ফাইল করেছি। অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে। আপিলের সাথে শুনানি হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু এই মামলা হাইকোর্টে তিনজন বিচারপতি শুনেছেন। সেজন্য আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানি করতে চারজন বিচারপতি প্রয়োজন। এই মামলা শুনানি করতে আমদের মনে হয় ৩০ থেকে ৪০ কার্যদিবস প্রয়োজন হবে। এখানে হাইকোর্টের রায়ই প্রায় কয়েক হাজার পাতা।
তিনি বলেন, বিস্ফোরক আইন মামলায় ২৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখানে ১ হাজারের মতো সাক্ষী আছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। এখানে বিস্ফোরক আইনে অনেকগুলো ঘটনা। অনেকেই জড়িত। কে দেখেছে কাকে দেখেছে সবই বলতে হবে। আসামীর সংখ্যা ৮০০ এর বেশি। তিনি বলেন, এ ঘটনা দুঃখজনক। তারা যেভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেরে ফেলেছে তা কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। এই অপরাধের যাতে দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এধরণের ঘটনা ঘটাতে না পারে। এখানে বিচারটা চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ হয়। পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোট ৭৪ জন। ওই ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। আটজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টের রায়ের পর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০৬ আসামি পৃথকভাবে ৫৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল করেন।