জাতীয়

বিশ্বের সম্ভাব্য সকল স্থানে রপ্তানি বাজার ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মোহনা অনলাইন

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে শিল্পপতি, শিল্প উদ্যোক্তাগণসহ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি আজ ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।  বিশ্বের সম্ভাব্য সকল স্থানে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বাজারকে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়ানোরও জোর তাগিদ দেন রাষ্ট্র প্রধান।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে এবং অর্থনৈতিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
কোন দুষ্টচক্র বা স্বার্থান্বেষী মহল যাতে উৎপাদনমুখী কারখানার পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।

সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘কেউ যাতে উৎপাদনমুখী  কারখানার পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। সরকার সবসময় আপনাদের পাশে আছে ও থাকবে।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা সম্প্রাসারণ ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৈদেশিক বাণিজ্য এখন অনেক বেশী চ্যালেঞ্জিং, প্রতিযোগিতামূলক এবং জ্ঞান ও নীতিমালাভিত্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে।
‘শ্রমিকরাই উৎপাদনমুখী শিল্পের চালিকাশক্তি। কারখানা ও শ্রমিক একে-অপরের পরিপূরক। শ্রমিক ভালো থাকলে কারখানা ভালো থাকবে,’ তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মনে রাখতে হবে আপনারা শুধু মুনাফার জন্য ব্যবসা পরিচালনা করছেন না। আপনাদের সামাজিক দায়িত্বের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম, শক্তিশালী, নিরাপদ ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদানুযায়ী ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তিসমূহকে  সাদরে গ্রহণ করার ও অনুরোধ করেন।
দেশের সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে  বস্ত্র ও পাট খাতের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় বস্ত্র খাতের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বস্ত্র শিল্পের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমঘন এই সেক্টরে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘স্মার্ট টেক্সটাইল’ সেক্টর গড়ে তোলা সম্ভব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে বস্ত্রখাত আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগনিত মানুষের কর্মসংস্থান যার ৮০ শতাংশ মহিলা এবং পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস।
তিনি জানান, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ বস্ত্র শিল্প থেকে অর্জিত হচ্ছে। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বস্ত্র খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বস্ত্র খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে রাষ্ট্রপতি বিশ্বাস করেন।
বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং গৌরবময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নেয়া সকল কার্যক্রম বাংলাদেশের বিকাশমান বস্ত্রখাতকে আরো সমৃদ্ধ করবে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী  জাহাঙ্গীর কবির নানক।
অন্যান্যের মধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব  মো. আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারর্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আযম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০২৩’ এর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১১টি প্রতিষ্ঠান-ব্যবসায়ীকে রাষ্ট্রপতির সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি সেখানে একটি ফটোসেশনে অংশ নেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button