জাতীয়

আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস ২০২৪

মোহনা অনলাইন

দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এরমধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করেন। একসময় গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা ছিল ডায়াবেটিস শুধু শহরের কিংবা ধনী মানুষের  রোগ। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রার ফলে এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামগঞ্জে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা।

উদ্বেগের কারণ হলো দেশের শতকরা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ জানেই না তারা রোগটিতে আক্রান্ত। এই রোগ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ২০৪৫ সালে দেশে রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

এমন পরিস্থতিতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস-২০২৪’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়।’

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গলে রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষে প্রয়োজনমতো ঢুকতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলে।

২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রামের  ১৪ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৭০ শতাংশ মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়াও  ২৫ থেকে ৬৫ বছরে ১১ হাজার মানুষের ওপরে এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস শনাক্তদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। ৩৬ থেকে ৪৫ বছরে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৪৬ থকে ৫৫ বছরের ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫৬ থেকে ৬৫ বছরের ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহের আট উপজেলায় এই সমীক্ষাটি করে সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এ সমীক্ষাটি করা হয় ১২ হাজার মানুষের ওপর। এর মধ্যে ১০ হাজার ২২৩ জনের ডায়াবেটিস ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়। এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ হাজার ৭০৪ জন নারী (৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং ৩ হাজার ৫১৯ জন (৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ) পুরুষ ছিলেন। তাদের গড় বয়স ছিল ৪৩ দশমিক ৬ বছর। ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতাদের বয়স ৪০ বছরের উপরে। উত্তরদাতাদের প্রায় ৮৮ দশমিক ৬ শতাংশ নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীভুক্ত। ৪২ দশমিক ৬ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশ গৃহিণী ছিল।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের; টাইপ-১ ও টাইপ-২। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সিদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস দেখা যায়। এ ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। দেশে টাইপ-১ রোগীর সংখ্যা কম। প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের শরীরে ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকে অথবা ইনুলিনের ঘটতি থাকে। এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। কারও কারও ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ ও ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের মতোই গ্রামাঞ্চলেও মানুষের জীবনাচরণ পাল্টাচ্ছে। গ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও নানা পরিবর্তন আসছে। ফার্স্ট ফুড কিংবা জাঙ্ক ফুডের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও হার বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে করেই খেলাধুলা ও শারীরিক চর্চা কমে গেছে। আর গ্রামের মানুষরাও আজকাল কায়িক পরিশ্রমের বদলে বিভিন্ন ডিভাইসের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ২৬ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগী শনাক্তের পাশাপাশি সব পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান সময়ের আলোকে  বলেন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও প্রতিদিনের পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। আর শরীর মোটা হয়ে গেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতাও কমে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগী শনাক্তে স্ক্রিনিং বাড়াতে হবে।  তা না হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button