ব্যাংক প্রধান হতে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সর্বোচ্চ পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা ও ন্যূনতম বয়স ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন থেকে ৪৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হতে পারবেন না। এমডি নিযুক্তির দুই মাস আগে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ নিয়োগ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সময় ও স্থানে এমডি পদে মনোনীত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার হবে। ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি সুবিধা, নববর্ষ ভাতা, ছুটি নগদায়নসহ অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা ব্যাংক এমডিরা নিতে পারবেন না। চিকিৎসাসহ যেকোনো প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। এমন সব বিধান রেখে এমডি পদে নিয়োগের নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চাইলেই হঠাৎ করে পদত্যাগ করে ব্যাংক ছেড়ে যেতে পারবেন না। আবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষও যখন-তখন কোনো এমডিকে সরিয়ে দিতে পারবে না। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের আগে কোনো এমডিকে ব্যাংক ছাড়তে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেই কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা–ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এমডি হিসেবে নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটির কাছে মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে। এরপরই তাঁর নিয়োগ ও মেয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সব ব্যাংক এমডির চুক্তির মেয়াদ প্রতিবার সর্বোচ্চ তিন বছর হবে।
নতুন সিদ্ধান্তে এমডিদের চাকুরির নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিলেও ব্যাংক থেকে নেওয়া নানা সুবিধাতেও লাগাম টেনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের অর্ধডজন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেছেন, এমডি নিয়োগে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা থাকার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু নীতিমালায় এমন অনেক শর্ত দেয়া হয়েছে, যেগুলো আমলে নিলে ব্যাংকের জন্য এমডি খুঁজে পাওয়া যাবে না। যোগ্য ও দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তারা এমডি হতে চাইবে না। প্রজ্ঞাপনের অনেক শর্তে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
এমডি সম্পর্কে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে কোনো বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকবে না। কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিধিমালা, প্রবিধান বা নিয়মাচার লঙ্ঘনের কারণে দণ্ডিত না হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অবসায়ন বা লাইসেন্স বাতিল হয়েছে এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত থাকার ইতিহাস থাকলেও কেউ এমডি হতে পারবেন না। কোনো কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিলের সঙ্গে কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অপরাধ জড়িত থাকার ইতিহাস থাকলে তাকেও ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও নৈতিক স্খলনের কারণে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা পরিচালক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকাকালীন স্বীয় পদ থেকে অপসারণ/বরখাস্ত/অবনমিত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিও ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট বা অনসাইট পরিদর্শনে তার বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ পর্যবেক্ষণ থাকা যাবে না। ঋণখেলাপি, করখেলাপি, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি এ পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ বন্ধ করে দেয়া বা আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় থেকে অব্যাহতি লাভ করা ব্যক্তিও ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না।
এমডি পদে নিয়োগ প্রাপ্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, উপযুক্ততা ও অভিজ্ঞতার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণী থাকলে ওই ব্যক্তি কোনো ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়েছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে এমডি পদে নিয়োগ ও এমডিদের দায়দায়িত্বের বিষয়ে এত বেশি বিস্তৃত কোনো নীতিমালা ছিল না। জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে অনেক বিষয়ই স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে এমন অনেক শর্তও আরোপ করা হয়েছে, যেগুলো পালন করতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।’