সংবাদ সারাদেশ

রাজধানীতে কিডনি কেনাবেচায় জড়িত ৩ জন গ্রেফতার

মোহনা অনলাইন

মানুষের দরিদ্রতাকে পুঁজি ও জিম্মি করে কিডনি কেনাবেচার সাথে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের সক্রিয় ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত হলেন-রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীন এবং আতাহার হোসেন বাপ্পী।এদের মধ্যে দুইজনকে ধানমন্ডির ইবনেসিনা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে রাজু ও শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাজুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভোররাতে বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে আরেক আসামি বাপ্পীকে গ্রেফতার করা হয়।

এজাহারে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসের কোনো এক তারিখে মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পিছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সাথে চা খাচ্ছিল এবং সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল।  কথাবার্তা চলাকালীন পাশে বসা অভিযুক্ত ১নং পলাতক আসামী মাছুমও চা পান করছিল। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভিকটিমকে বলে যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান হয় এবং পরবর্তীতে ১নং পলাতক আসামীর সাথে প্রায় ১৫/২০ দিন মোবাইলে কথা হয়। অভিযুক্ত ১নং পলাকত আসামী ভিকটিমকে ভারত নিয়ে যাবে এবং সকল কার্যক্রম করবে বলে প্রস্তাব দেন, যাতে ভিকটিম রাজি হয়।

পরবর্তীতে ১নং পলাতক আসামি ভিকটিমকে পাসপোর্ট করে দিতে সহায়তা করে বলে যে, ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ভিসা কার্যক্রম শেষ করে অভিযুক্ত ১নং ধৃত আসামি ও ১নং পলাতক আসামি ভিকটিমের সাথে অভিযুক্ত ২নং ধৃত আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) এবং ৩নং ধৃত আসামি মোঃ আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে যে, তারা একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার, বাংলাদেশ ও ভারতে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। আসামিরা অনলাইনে বিমানের টিকেট ক্রয়পূর্বক ভিকটিমের হোয়াটস্ অ্যাপে পাঠায়। টিকেট নিয়ে ভিকটিম গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ বিকেলে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে ইনডিগো এয়ারলাইনসের বিমানে করে ভারতের নয়াদিল্লিতে পৌঁছায়।

ভিকটিমকে রিসিভ করেই অভিযুক্ত ২নং ও ৩নং পলাতক আসামি পাসপোর্ট কেড়ে নেয় এবং ভাড়া করা একটি প্রাইভেট কারযোগে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে যায়। অভিযুক্ত ৩নং আসামি ভিকটিমকে তার আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দূরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি প্রদানের জন্য প্ররোচিত করে এবং ভয়ভীতি দেখায় যে, পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশেও ফিরে আসতে পারবে না। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে যায়।

আসামিরা যোগসাজসে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সুকৌশলে গত ৪ মার্চ ২০২৪ ভারতের গুজরাট কিডনি এন্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে নাভীর নিচে তলপেট বরাবর অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি প্রদানে বাধ্য করে।

ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button