
কাঠাল পাতা লাগবে, কাঠাল পাতা । এ কাঠাল পাতা ছাগলের শস্য নয়। এ কাঠাল পাতা ঠোঙ্গা বানানোর জন্য-ও নয়। এটি একটি সংকেতিক কোড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই কোড ব্যবহার করে মরণঘাতি মাদক দ্রব্য বিক্রি করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন থেকে সবার কাদে বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।
রাজধানীর কড়াইল বস্তি থেকে ৫০-৬০ গল্প দুরেই সাজনতলা টিঅ্যান্ডটি নৌকা ঘাটে। এই ঘাটে দাড়িয়েই কাঠাল পাতা, কাঠাল পাতা হাঁক দিয়ে দিয়ে বিক্রি হচ্ছে মাদক দ্রব্য সামগ্রী। এই কাঠাল পাতার ছদ্মারবনে বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবা বা হেরোইন, এদের আবার নাম ভেদ আছে। গাঁজা হচ্ছে-ঘাস পাতা’ ইয়াবাকে ‘পট বা গুটি’ বলা হয়। হেরোইন হচ্ছে , পুরিয়া । ১০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকায় এই মাদক দ্রব্য বিক্রি করছে।
জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।
বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।
বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামাইবাজার বস্তির পঞ্চাশোর্ধ্ব এক রিকশাচালক জানান, তাঁর দুই ছেলে। ঘরের পেছনের গলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি হতো। বছর দুয়েক আগে তাঁর ১৬ বছরের ছোট ছেলে ইয়াবা সেবন শুরু করে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ইয়াবা পাওয়া সহজ না হলে হয়তো আমার ছেলে ওই পথে পা বাড়াত না। এখনও তাকে ফেরাতে পারিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. রানার লোকজন। রানা তাদের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রি করেন। তবে বিক্রেতারা নিজের পকেটে বা হাতে এসব রাখেন না, লেকের কিনারায় কলাগাছের ফাঁকে কিংবা রাস্তার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রেখে দেন। ক্রেতার কাছ থেকে একজন টাকা নেন, আরেকজন গোপন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া এনে হাতে তুলে দেন।