
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল মন্ত্রী (জলবায়ু পরিবর্তন এবং শক্তি বিষয়ক) ক্রিস বাওয়েন এবং সিডনির নিকটবর্তী বাংলাদেশি-অধ্যুষিত অন্যতম উপশহর প্যারামাটা’র ফেডারেল সদস্য ড. অ্যান্ড্রু চার্লটন এমপি বাংলাদেশে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
উভয় নেতা বাংলাদেশের জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও সহায়তা দেবার উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির প্রতিশ্রুতির কথা পুনরুল্লেখ করেন। এই সংখ্যালঘুরা অতীতের মতোই গত আগস্ট থেকে চলমান দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
গত রবিবার, ২৩ মার্চ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পশ্চিমাঞ্চলীয় উপশহর পেমুলওয়ের এলেন জি ইজি কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠন “অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যাণ্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ (এএফইআরএমবি)” আয়োজিত মিট-অ্যান্ড-গ্রিট অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে নেতৃদ্বয় উপরোল্লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।
দুপুর ১২টা থেকে এক ঘন্টাব্যাপী এই আলোচনা অত্যন্ত সুচারুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি পরিচালনা করেন সিডনির কাম্বারল্যান্ড সিটি কাউন্সিলের তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত লেবার পার্টির কাউন্সিলর সুমন সাহা। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির শতাধিক সদস্য, তাদের পরিবার এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনটির কার্যকরী পরিষদের সেক্রেটারি অপু সাহার স্বাগতিক বক্তব্যের পর সংগঠনের বোর্ড সদস্য ড. স্বপন পাল এই আলোচনার প্রেক্ষাপট অর্থাৎ বাংলাদেশে বিরাজমান নৈরাজ্য, সন্ত্রাস এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি চলমান নির্যাতনের চিত্রটি তুলে ধরেন। বোর্ডের আরেক সদস্য, ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ দত্ত, কমিউনিটির পক্ষ থেকে নেতাদের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট আবেদন পেশ করেন।
সংখ্যালঘুদের প্রতি সাম্প্রতিক নির্মম অত্যাচারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নির্যাতনের শিকার পরিবারের দুই সদস্য, তনুশ্রী রায় এবং নির্মাল্য চক্রবর্তী, লোমহর্ষক নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চলমান এই অমানবিক নিপীড়নমূলক ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মন্ত্রী বাওয়েন এবং ড. চার্লটন তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত অনেকের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তাদের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করেন। উপস্থিত সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘুদের সাহায্যের লক্ষ্যে সরকারকে আরও উপায় খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান। এই নেতারা কমিউনিটিকে আশ্বস্ত করেন যে, ক্ষমতাসীন লেবার সরকার রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি আলোচনা করে তাদের সাধ্যমত সবরকম সহায়তা দেবার চেষ্টা করবে। তাঁদের প্রতিশ্রুতি গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কমিউনিটির উদ্বেগ এবং সমস্যাগুলি বুঝতে তাদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেয়া, অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা, মানবিক এবং অন্যান্য প্রকারের ভিসা সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং শান্তি বজায় রাখতে কমিউনিটির সাথে একত্রে কাজ করা, অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে কমিউনিটির উদ্বেগগুলো পুনরুত্থাপিত করা, এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক এমপি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর পেনি ওয়ং এর অফিশিয়াল বিবৃতিপ্রদানের জন্য আবেদন করা। আলোচনায় অনুষ্ঠানে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি যৌথভাবে সেমিনার আয়োজন করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
এএফইআরএমবি-র কার্যকরী পরিষদের সভাপতি সুরজিৎ রায়ের সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।