কাশ্মীরে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান—উভয় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার (২৭ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা “দায়িত্বশীল সমাধানের” জন্য কাজ করতে সব পক্ষকে উৎসাহ দিচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে পাকিস্তান দায় অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে, যদিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও সমালোচনা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে ই-মেইলে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, “এটি একটি চলমান পরিস্থিতি। আমরা এটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং একাধিক স্তরে ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে দায়িত্বশীল সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানায়।”
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পুনরুল্লেখ করে জানান, “ওয়াশিংটন ভারতের পাশে রয়েছে এবং পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।” বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে, বিশেষ করে এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশলের অংশ হিসেবে। তবে পাকিস্তান এখনও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির কূটনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক ও ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের লেখক মাইকেল কুগেলম্যান রয়টার্সকে বলেন, “বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ অংশীদার। ভারত যদি সামরিক প্রতিশোধ নেয়, তাহলে এটি পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারে এবং হয়তো বাধা দেবে না।”
তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলের সংঘাতসহ বৈশ্বিক সংকটগুলোর কারণে ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে অনেক ইস্যু সামলাচ্ছে। ফলে প্রাথমিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের মতো করে পরিস্থিতি সামলাতে দেওয়া হতে পারে।”
সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত ও হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হুসেইন হাক্কানি মন্তব্য করেন, “এই মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের বিশ্বাস, ভারত পাকিস্তানকে দুর্বল করতে চায়। প্রতি কয়েক বছর পরপর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। এবারে যুক্তরাষ্ট্র সেই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বিশেষ কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।”
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সতর্ক করে দেন—ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও যদি এমন ধারণা তৈরি হয় যে যুক্তরাষ্ট্র সব অবস্থায় ভারতকে সমর্থন করবে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে।



