সংবাদ সারাদেশ

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (গ্রেড-২) পদোন্নতি পেলেন বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর

মোহনা অনলাইন

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গর্ব বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর বিচার বিভাগে নিজের দক্ষতা ও সততার স্বাক্ষর রেখে প্রজাতন্ত্রের গ্রেড-২ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থেকে পদোন্নতি পেয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (গ্রেড-২) পদে উন্নীত হয়েছেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারা অনুযায়ী তিনি এখন জাস্টিস অব পিস বা শান্তিরক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে অভিহিত হবেন। তার এই সাফল্যে স্থানীয় এলাকাবাসী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর খোকসা কলেজের প্রাক্তন স্বনামধন্য অধ্যাপক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের জ্যেষ্ঠ পুত্র। পারিবারিকভাবেই তিনি সততা ও শিক্ষার আদর্শে বড় হয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম ডিগ্রি সম্পন্ন করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি মেধা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন।

বিচারিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বৈজয়ন্ত বিশ্বাস কেবল প্রথাগত রায় এবং আদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বিভিন্ন আলোচিত মামলায় যুগান্তকারী সব রায় ও আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি নানাবিধ জটিল সমস্যা সমাধানেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন যা প্রায়শই মিডিয়া এবং সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর অত্যন্ত সাহসী এবং দৃঢ়চেতা একজন মানুষ। রাজনৈতিক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি সবসময় নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন যা তাকে জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। তার কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এখানে দেওয়া হলো:

২০১২ সালে তিনি একটি জেলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে জেলা প্রশাসক, এনডিসি, আরডিসি সহ জেলা প্রশাসনের ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

২০১৪ সালে তিনি আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিএম দেলোয়ারের ছেলে জিএম মুসা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের ভাগ্নে জুয়েলকে কারাগারে পাঠান।

২০১৫ সালে তিনি রুবেল নামের হারিয়ে যাওয়া একটি ছেলেকে প্রায় অলৌকিক উপায়ে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন।

২০১৬ সালে তিনি একজন আইনজীবীকে মারধর করার অভিযোগে একটি জেলার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণ করে তাকে আদালতে তলব করেন।

২০১৭ সালে তিনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে আসাদ নূর ও লিমন ফকিরকে জেল হাজতে পাঠান এবং পরবর্তীতে রিমান্ডে দেন।

২০১৮ সালে তার আদেশে একটি জেলার সিভিল সার্জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

২০১৯ সালে তিনি পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক কর্তৃক অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত ৩ জন কর্মচারীর চাকরি ফিরিয়ে দেন।

২০২০ সালে তিনি ঝিনাইদহের ক্লিনিক সমূহের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও স্বাস্থ্যসেবার মান বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

২০২১ সালে তিনি বাড়ি হারিয়ে গিয়ে ৩২ মাস ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আটক থাকা বাক প্রতিবন্ধী মৃণালকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

২০২২ সালে তিনি শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি শাওন শিকদারের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন এবং রিমান্ডে পাঠান।

২০২৩ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ ১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

২০২৪ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

তার এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে তিনি বারবার সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন এবং সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। বিচারিক কাজের বাইরেও স্থানীয় জনদুর্ভোগ লাঘবে তার ভূমিকা দারুণ প্রশংসনীয়। বিশেষ করে খোকসা বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় এমপি কর্তৃক অবৈধভাবে নির্মিত আইল্যান্ড উচ্ছেদ, খোকসা রেলওয়ে স্টেশনে বেনাপোল এক্সপ্রেসের স্টপেজ প্রদান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সোমশপুর টু সেনগ্রাম রাস্তা সংস্কারের মতো অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে তার প্রত্যক্ষ সহায়তা এলাকাবাসী কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। বিচারকের আসনে বসেও তিনি যে সাধারণ মানুষের কতটা আপন হতে পারেন, তা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন।

ব্যক্তিজীবনে বৈজয়ন্ত বিশ্বাস অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তার চালচলনে কোনো বাহুল্য বা অহংকারের লেশমাত্র নেই। তার এই সাদামাটা জীবনযাপন এবং অমায়িক ব্যবহার তাকে স্থানীয়দের কাছে একজন “আদর্শ মানুষ” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

খোকসার সন্তান হিসেবে বিচার বিভাগের এতো বড় পদে তার পদোন্নতি এলাকার মানুষের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। স্থানীয়রা মনে করেন, তার এই পদোন্নতি কেবল তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি সততা ও ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি। নতুন দায়িত্বে তিনি দেশের বিচার ব্যবস্থায় আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে সকলের প্রত্যাশা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button