টিকটকে পরিচয়, দুইবার ভারতে পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার তিন
লালমনিরহাটে এক নারীকে ভারতে পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রোববার (২২মে) দুপুরে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।
তিনি জানান, গ্রেফতার তিনজনকে আদালতে নেয়া হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ভুক্তভোগী নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়ার মৃত ওমর আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম ভুটুয়া (৩৫), একই এলাকার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে মোকছেদুল হক (৩২) ও পাটগ্রাম পৌরসভার রসুলগঞ্জ জুম্মাপাড়ার শফিক হোসেনের স্ত্রী চম্পা বেগম (৩৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টিকটক ভিডিও তৈরি করার সুবাদে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়ার ছেলে সোহেল মিয়ার সাথে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর টিকটকে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে মেয়েটিকে নিয়ে সাতক্ষীরার সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি জমান সোহেল। সেখানে কলকাতা শহরে মেয়েটিকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন সোহেল। পরে ৮-৯ মাস অবস্থানের পর একই সীমান্ত দিয়ে কৌশলে পালিয়ে আসেন ওই তরুণী। সোহেলও কিছুদিন পর সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন। এরপর চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ আদালতে ওই তরুণীকে বিয়ে করেন। কিছুদিন স্ত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন সোহেল। এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।
গত ১৩ মে স্ত্রীকে কৌশলে পাটগ্রামের দহগ্রামে পাঠান সোহেল। দহগ্রাম থেকে ভারতে পাঠানোর সময় পাচারকারীদের একজন মোকছেদুল ইসলাম ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ভারতে পাচারের পর ওই নারী বুঝতে পারেন, স্বামী তাকে আবার পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। পরে লালমনিরহাটের দহগ্রাম দিয়ে ১৫ মে পুনরায় ফিরে আসেন তিনি। ফেরার পথে অপর পাচারকারী আশরাফুল ইসলামের কাছে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। পরে টাকার জন্য ওই নারীকে আটকে রাখেন আশরাফুল।
শনিবার (২১ মে) সকালে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে পাটগ্রাম থানায় অভিযোগ দেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উমর ফারুক অভিযোগ আমলে নিয়ে রাতেই অভিযান চালান। পরে পাচার ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে স্বামী সোহেলকে প্রধান করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পাটগ্রাম থানায় মামলা করেন।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, গ্রেফতার তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে মূলহোতা স্বামী সোহেল মিয়া এবং এজাহারনামীয় দহগ্রামের একজন পাচারকারী পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।