সাবেক স্পীকারের বাড়ী থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার
রুবায়েত বাপ্পী - ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
সাবেক স্পীকারের বাড়ী থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার । নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হাজারো নারী পুরুষের বিক্ষোভে উত্তাল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শিমলা গ্রাম । সন্দেহভাজন একজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ । হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চান নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী ।
বাবাকে আর বলবেনা বাবা চিপস এনে দাও । মাকে আর বলবেনা মা ভাত দাও । ঘাতকের থাবায় ঝড়ে গেলো চার বছর বয়সী শিশু রোবাইয়ার প্রাণ। কেন এমন নির্মমতা, কি অপরাধ ছিলো ফুটফুটে শিশু রোবাইয়া’র? বাবার আদর আর মায়ের স্নেহের আঁচল থেকে কেড়ে নিলো একটি অবুঝ শিশুর স্বপ্ন, ফেরেশতার মতো নিষ্পাপ একটি কন্যার জীবন। জঘন্যতম এমন বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শিমলা গ্রামে।
জানাযায় গত ১৯শে মে স্থানীয় ব্র্যাক স্কুল থেকে ফিরে বাবার সাথে বাড়ী থেকে পাশের দোকানে চিপস কিনতে যায় রোবাইয়া। ঐ দিন আনুমানিক বেলা ১১টা নাগাদ রোবাইয়াকে চিপস কিনে দিয়ে বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে রোবাইয়া’র বাবা দিনমজুর রিক্সাচালক কাজে চলে যায়। চিপস খেতে খেতে রোবাইয়া বাড়ীতে গিয়ে আবার বাড়ীর বাহিরে চলে আসে। এরপর থেকে রোবাইয়াকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ছোট্ট শিশুটিকে না পেয়ে রোবাইয়ার পরিবার ও এলাকার লোকজন খুঁজো খুঁজি করতে থাকে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ খোজ মেলে রোবাইয়ার। কিন্তু তখন বাবাকে বাবা আর মাকে মা বলার শক্তিটুকুও নিঃশেষ হয়ে যায় রোবাইয়ার। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে নিষ্পাপ শিশু রোবাইয়ার নিথর দেহ। তাও আবার সুউচ্চ দেয়ালে ঘেরা এরশাদ আমলের সাবেক স্পীকার মরহুম শামছুল হুদা চৌধুরীর গ্রামের বাড়ীর আঙ্গিনায়। রোবাইয়ার মাথা ও চোখে আঘাতের চিহ্ন সহ রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধারের কথা জানায় এলাকাবাসী।
লাশ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান যেখানে রোবাইয়ার লাশ পড়ে ছিলো সেসময় রোবাইয়ার প্যান্টটি হাটু পর্যন্ত খোলা ছিলো। কেউ কেউ অভিযোগও করেছেন হয়ত ধর্ষণ চেষ্টা বা ধর্ষণের বিষয় জড়িত থাকতে পারে। জনমনে প্রশ্ন চার দেয়ালে ঘেরা গেট লাগানো সুউচ্চ ওয়াল ডিঙ্গিয়ে সাড়ে চার বছরের শিশুটি কেমনে ভেতরে গেলো ? কেউ কেউ সন্দেহ করছেন আমের লোভ দেখিয়ে হয়তো রোবাইয়াকে ডেকে নিয়েছে কেউ। তারপর হয়তো যে কোন কারণে রোবাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে।
যাই হোক এটা যে হত্যা তা অকপটে বিশ্বাস করে রোবাইয়ার এলাকাবাসী শিমলা গ্রামের মানুষ। হত্যার অভিযোগও আছে গ্রামবাসীর। তারা অভিযোগ করেন সাবেক স্পীকার মরহুম শামছুল হুদা চৌধুরীর বাড়ীর কেয়ারটেকার সুলতানের পরিবার হত্যাকান্ডে জড়িত । গ্রামবাসী অভিযোগ করেন সাবেক এ স্পীকারের বাড়ীতে মাদক ও নেশার আড্ডা বসান কেয়ারটেকার সুলতানের ছেলে মোতালেব। তারা বলেন মোতালেব সবসময় নেশাগ্রস্ত থাকে। আর ঘটনার দিন মোতালেব বাড়ীতেই ছিলো। এলাকাবাসীর ধারনা মোতালেবই এমন জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে শিশু রোবাইয়া হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চান তারা। ৩০শে মে ঘটনাস্থল সাবেক স্পীকারের বাড়ীর সামনের সড়কে হাজারো নারী পুরুষ রোবাইয়ার হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা বলেন শিশু রোবাইয়ার হত্যাকারীদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করতে কেউ সাহস না পায়।
শিশু সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রোবাইয়ার দরিদ্র বাবা মা। সন্তানের হত্যার বিচার চান তারা।
তবে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্পীকারের বাড়ীর কেয়ারটেকার সুলতান ও তার এক ছেলে।
রোবাইয়া হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধনে নিহত শিশুর পিতা মহির উদ্দিন মহুর, মা সাবিনা ইয়াসমিন, মানকোন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ছিল, আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি জহির উদ্দিন রাজু, এনজিও কর্মী পূর্ণিমা সরকার, আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মাবনবন্ধন শেষে হাজারো নারী পুরুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, শিমলা গ্রাম থেকে চলতি মাসের ১৯ তারিখ রোবাইয়া আক্তার নামের একটি মেয়ে শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। লাশের গায়ে আঘাতের চিহৃ ছিল। শিশুর বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এই ঘটনায় মোতালেব হোসেন নামের এক যুবককে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পুলিশি রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে । সেসব নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। খুব দ্রুতই প্রকৃত আসামী শনাক্ত ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।