ছাত্রের হাতে শিক্ষকের হত্যার ঘটনায় আশুলিয়ার চিত্রশাইলে আন্দোলন
সাভার প্রতিনিধি- জিয়া উদ্দিন
সাভারের আশুলিয়ায় কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যার ফলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আশুলিয়া থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠছে সাভার আশুলিয়া অঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার চেয়ে মানব বন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে চিত্রশাইল এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কলেজের প্রভাষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ তুলেছেন।
বাইরে থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ওই শিক্ষার্থী মারধর করেছেন বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
কলেজ অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানও একই দাবি করেছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পাওয়ায় তার পরিবারের কোনও মন্তব্য মেলেনি।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের মূলত হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের একজন শ্যালিকার ছোট বোন এই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সাথে অভিযুক্ত জিতুর অনেক আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক। কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন শিক্ষক উৎপল তাদের শাসিয়ে দেন। এমনকি ওই শিক্ষক মেয়ের পরিবারের কাছে ফোন করে সব জানিয়ে সতর্ক করেও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়েটা অভিযুক্ত জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
খেলার দিন আগে থেকেই কলেজের বাইরে স্ট্যাম্প নিয়ে ঘুরছিলেন জিতু। তার সাথে আরও তিন জন যুবক ছিল। ঘটনার পরপর তারা চার জন একসাথে হেঁটে চলে যায়। জিতুর সাথে তাদেরই কলেজের এক মেয়েকে স্কুলকক্ষে একসাথে পাওয়ার পর স্যার মেয়ের পরিবারকে জানায়। স্যার মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিল। যাতে মেয়েটা জিতুর সাথে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে। জানান এক শিক্ষার্থী…
সকালে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় নিহতের সহকর্মী শিক্ষকের সাথে কথা হয় মোহনা টিভির। এসময় পূর্বপরিকল্পিত ক্ষোভে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু হাজি ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে মারধর করেছে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
শিক্ষকের ওপর হামলা চালানোর বিষয়ে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থী জিতু। তার প্রমাণ মেলে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গিয়ে। দিনের ঘটনার আগে থেকে সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই রেকর্ড হয়নি বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। তবে পরিকল্পনা মাফিক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জিতু কলেজের বিদ্যুতের মেইন সুইচ কৌশলে কোন এক সময় নামিয়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে ওই সময় সিসিটিভি বন্ধ ছিল।
এছাড়াও,শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার (৩৫) কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠছে সাভার আশুলিয়া অঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এরই মধ্যে হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার চেয়ে মানব বন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে চিত্রশাইল এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজ এবং এর আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান আসামী বখাটে আশরাফুল ইসলাম জিতুকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী সহ ৬ দফা দাবী তুলেন। দাবী আদায়ে এরই মধ্যে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগ দিয়েছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে যোগ দিতে গণসংযোগ করেছে। এদিকে,চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেছেন আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম কামরুজ্জামান মুঠোফোনে জানায়,অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরন করেছে পুলিশ,বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
নিহত ৩৫ বছর বয়সী শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।