স্বর্ণের দুলের লোভে শিশুকে হত্যার দায়ে আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড
মামুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
জেলার রায়পুরে কানের দুল ছিনিয়ে নিতে পপি সাহা নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে রুনা আক্তার আঁখি (২৪) নামে এক নারীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। একই সাথে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মামলার আসামী রুনার স্বামী এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা ও তার স্বামী এমরান আদালতে উপস্থিত ছিল। আদালত রুনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আসামী রুনাকে দোষী সাবস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় এবং তার স্বামী এমরানকে খালাস দিয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত রুনা রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের এমরানের স্ত্রী। ভিকটিম পপি উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
মামলার এজাহার এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামী রুনা আক্তার আঁখি এবং তার স্বামী এমরান ঘটনার তিনমাস আগ থেকে রায়পুর উপজেলার সাগরদি গ্রামের ফারুক হাওলাদার বাড়ির কাশেম হাওলাদারের একটি ঘর ভাড়া নেয়। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে আড়াইটার মধ্যে রুনা পাশ্ববর্তী নেপাল সাহার বাড়ির নির্মল সাহার স্কুল পড়ুয়া শিশুকন্যা পপি সাহাকে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নেয়। এসময় শিশুর কানে থাকা ৩ আনা ওজনের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেয় রুনা। এতে শিশুটি চিৎকার করতে চাইলে রুনা তার মুখ ও গলা চেপে ধরে। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে তার মৃতদেহ খাটের নীচে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার পর রুনার স্বামী এমরান হোসেন ঘরে আসলে তার স্ত্রী তাকে হত্যার ঘটনাটি জানায়। এতে সে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।
অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় শিশুটির কোন খোঁজ না পেয়ে বাড়ির লোকজন এবং স্বজনেরা খোঁজ চালায়। ওই বাড়ির এক নারী রুনার ঘরে পপির মৃতদেহটি দেখতে পায়। পরে রায়পুর থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং রুনা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে। রুনা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করে। কানের দুল ছিনিয়ে নিতে সে শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ওইদিন শিশুটির মা ববিতা রানী সাহা (৩২) রায়পুর থানায় রুনা এবং তার স্বামী এমরানকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেন। এতে রুনাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এবং তার স্বামীকে হত্যার তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।