হাত বদলে সবজির দাম বাড়ে তিনগুণ! বঞ্চিত কৃষক, জাঁতাকলে পিষ্ট ক্রেতারা
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর ( গাজীপুর) প্রতিনিধি
মৌসুমি সবজিতে সরগরম থাকলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না গাজীপুরের শ্রীপুরের চাষীরা। কৃষক থেকে ক্রেতার হাত পর্যন্ত আসতেই এসব পণ্যের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ ক্রেতারা।
বুধবার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে নিত্যপন্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও রমজানকে ঘিরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি,মাংস দুধ,ডিমসহ নানা কৃষি পন্য। তবে, প্রান্তিক কৃষক কোনো পণ্যের দাম ৩০ টাকা পেলে সেই পণ্য বাজারে মিলছে ৬০ টাকায়। মাঝে বদল হচ্ছে দুই থেকে তিন হাত। আর তাতেই দাম বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের। অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে পরিবহন আর জ্বালানির খরচ বৃদ্ধিকে। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনকে জানিয়ে নিরব বাজার পরিচালনা কমিটি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষকের উৎপাদিত এসব পণ্য ভোক্তা পর্যন্ত আসতে কমপক্ষে তিনহাত বদল হয়। প্রত্যেক হাত বদলের সময় দাম বেড়ে যায়। কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারী, বেপারী থেকে পাইকার, পাইকার থেকে সর্বশেষ খুচরা দোকানির কাছে পৌঁছায় এসব কাঁচা পণ্য। কৃষক যদি কোনো পণ্যের দাম ১০ টাকা পান তাহলে শেষে ক্রেতাকে তা কিনতে হয় কমপক্ষে ৩০ টাকায়।
পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামে ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কথা শুনে কে। কষ্ট করে সবজি চাষ করে বাজারে যেতেই টানাটানি করে দোকানিরা নিয়ে যায়। আমরা তো আর দোকানে বসে খুচরা বিক্রি করতে পারি না।
টেলিহাটি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, উৎপাদনের সব উপকরণের দাম বেশী। তারপরও নিজেদের শ্রমে ফসল চাষাবাদ করে কমদামে ক্ষেতের সবজি বিক্রি করছি। কিন্তু বাজারে গিয়ে সেগুলোর দাম বেড়ে যাচ্ছে।
শ্রীপুর বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা রুবেল মিয়া জানান, কৃষকের কাছ থেকে ১-২ কেজি কেনার চেয়ে আড়ৎ থেকে মণের মণের একসাথে কিনে দোকানদারি করি। সেখানে বেশী রাখলে আমরাও বেশী দামে বিক্রি করি।
টং দোকানি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আমরা কিনে কিছুটা বেশী দামে আমাদের বিক্রি করতে হয়। কারন, টং দোকানের খাজনা,বিদ্যুৎ বিল,কর্মচারীর মজুরি ও যাতায়াত খরচসহ অনেক খরচ আছে। এছাড়াও কাঁচামালের ঘাটতি আছে। সবমিলিয়ে ডবল দামে বিক্রি করলেও অনেক সময় আমাদের লোকসান গুনতে হয়।
শ্রীপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন খান রতন মোহনা টেলিভিশনকে বলেন, “আড়ৎদারদের সিন্ডিকেট চক্রের কারনে বাজার পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আমরা নিজেরা নিয়মিত বাজারে খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনকে অবগত করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড বাজারে অভিযান চালালে কিছুদিন স্বাভাবিক থাকে”।