যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, এই নীতির কারণে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সহিংসতা থেকে দূরে থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিবৃতি দেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনের তথাকথিত ৩(গ) বিধান অনুসারে ভিসা সীমাবদ্ধতা নীতির বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণাকে বাংলাদেশ সরকার আমলে নিয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সচেতন। ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের দেওয়া রায় কেড়ে নিয়ে কোনো সরকারের ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকারকে রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা হিসেবে বিবেচেনা করে। জনগণের এই ভোটাধিকারের জন্য এ সরকারের নিরলস সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য জমায়েতের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি যেখানে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে ২০০৬ সালের ৪১.৪ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশং এবং একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্য ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এখন উন্নয়নের একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে স্নাতক হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছে। গত চৌদ্দ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে এটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া সমস্ত সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে চলছে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফটোভিত্তিক ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে তার কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সাজানো হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন- ২০২২ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এ আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ দ্বারা বাধ্যতামূলকভাবে, সমগ্র নির্বাহী কাঠামো নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে যাতে এটি দায়িত্ব পালনে সহায়তা করতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সেই বিবেচনায়, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক আয়োজনে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সত্তার হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবেলার জন্য সরকারি কাঠামো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। সরকার আশা করে যে স্থানীয় অগণতান্ত্রিক শক্তি যারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানের নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করার তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশে উন্নয়নের অর্জনকে টিকিয়ে রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের উপর নির্ভর করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর টেকসই অঙ্গীকারের পাশে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে বলে সরকার প্রশংসা করে।
এর আগে বুধবার (২৩ মে) রাতে এক টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের বিষয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। টুইট বার্তায় ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারায় একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত থাকবে সেসব বাংলাদেশিদের ভিসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর আওতায় বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কার্যক্রম হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করেছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
ব্লিঙ্কেন উল্লেখ করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার-ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যারা চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।