ফেসবুক বন্ধুর ডাব খেয়ে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী, থানায় মামলা
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
কলেজে পরীক্ষা শেষে স্বাধীন নামে এক কিশোরের সাথে ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে ডাব খাওয়ানোর প্রস্তাব পায় ভুক্তভোগী একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে তাকে জোর করে ডাব খাওয়ানো হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে সিএনজি যোগে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কয়েকজনের সহযোগিতায় ধর্ষণ করা হয়। পরে রাস্তায় ফেলে অন্যরা চলে গেলে ওই শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিএনজিতে উঠিয়ে সটকে পড়ে স্বাধীন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লৌমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে ওই ছাত্রীর জ্ঞান ফিরে এলে স্বাধীন (২২) নামে এক কিশোরের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে অভিযুক্ত করে সেদিনের নির্যাতনের কথা অভিভাবকদের জানান। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ফারদিন হাসান স্বাধীন নামে ওই কিশোর শ্রীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড (মার্কাজ মসজিদ) এলাকার সুলতান উদ্দিনের ছেলে। শ্রীপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগ ও ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই ছাত্রী শ্রীপুরের একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। তারা আরও জানান, সোমবার (৫ জুন) সকালে শ্রেণি পরীক্ষায় অংশ নিতে নিজ বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম থেকে বের হয়। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে বাড়ি না ফেরায় ছাত্রীর মুঠোফোনে কল করলেও রিসিভ হয়নি। বিকেল ৪টার পর ছাত্রীর ফোন অপর এক অজ্ঞাত ব্যাক্তি রিসিভ করেন। ওই ব্যাক্তি জানান ছাত্রীকে গোসিঙ্গা-রাজাবাড়ী সড়কের কুটুমবাড়ী রিসোর্টের সামনে থেকে কতিপয় যুবক সিএনজিতে তুলে দিয়েছে বলে জানান। পরে শ্রীপুরের কাপাসিয়া সড়কের পটকা এলাকা থেকে ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (০৬ জুন) সকালে ওই ছাত্রীর জ্ঞান ফিরে এলে সে ধর্ষণের কথা জানায়।
ওই ছাত্রী জানান, তার ছোট ভাইয়ের নাম স্বাধীন। সে ওই ছাত্রীর কাছে নিজেকে তার ছোট ভাইয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে তার সাথে দুইদিন আগে কথা বলে। সোমবার (৫ জুন) কলেজ থেকে বের হলে ছোট ভাইয়ের বন্ধু পরিচয় দেওয়া স্বাধীন তাকে দেখে ডাব খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়। এক পর্যায়ে স্বাধীন তাকে জোর করে ডাব খাওয়ায়। ডাব খাওয়ার পর থেকে সে আর কিছু বলতে পারে না। স্বাধীনের সাথে থাকা লোকজন তার শরীরের নাক ফুল, কানের দুল, বেসলেট ও গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সিএনজি চালক মনির বলেন,” আমি গাজীপুর থেকে ফিরছিলাম। ওই এলাকায় আসলে কয়েকজন লোক ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ বলে আমার সিএনজি যোগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। আমি সরল মনে ওই শিক্ষার্থী ও একজন ছেলেকে সিএনজিতে উঠিয়ে শ্রীপুরের দিকে আসতে থাকি। কাছাকাছি স্থানে আসলে সিএনজি থেকে ওই যুবক লাফ দিয়ে নেমে পড়ে”।
মনির আরও বলেন, গাড়িতে থাকা ওই শিক্ষার্থীকে নানা হুমকি ধামকী দিচ্ছিল ওই যুবক। শিক্ষার্থীও গালি দিতে দিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল”।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম. নাসিম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবার দেওয়া এজাহারটি মামলা আকারে গ্রহন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে ইতোমধ্যে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।