দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার নাটোরের চামড়া আড়তে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মোঃ রাশেদুল ইসলাম, নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের চামড়া আড়তে প্রস্তুতিমুলক কাজ প্রায় শেষ , ট্যানারী মালিকদের কাছে ২০ সালের আগের বকেয়া টাকা প্রাপ্তি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার নাটোরের চামড়া আড়ৎ। প্রতিবছর ট্যানারীর চাহিদার ৩০/৩৫ ভাগ কাঁচা চামড়া নাটোরের এই আড়ৎ থেকে সরবরাহ করা হয়। এবারো সেই টার্গেট নিয়েই প্রস্তুুত হচ্ছে ব্যাবসায়ীরা। আড়ৎ মেরামত সহ ধোয়া মোছা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় শেষ। অপেক্ষা চামড়া কেনার। তবে ট্যানারী মালিকদের কাছে ২০ সালের আগের বকেয়া টাকা প্রাপ্তি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এবারে প্রায় ৬ লাখ গরুর চামড়া সহ প্রায় ১৬ লাখ পিস চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নাটোর শহরতলীর চকবৈদ্যনাথ এলাকার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার। এই বাজারে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক আড়ৎ রয়েছে। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেরামতের কাজ সমাপ্ত প্রায়। এবারে প্রায় ৬ লাখ গরুর চামড়া সহ প্রায় ১৬ লাখ পিস চামড়া আমদানী হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। যদি ন্যায্য মূল্যে লবনের পর্যাপ্ত সরবরাহের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে তাহলে চামড়া সংরক্ষনে কোন সমস্যা থাকবে না।
বর্তমানে চামড়ার বাজার ভাল, তাই ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মঞ্জুর আলম, নুরুল ইসলাম নুরু, দুদু সরকার, নান্নু, কমল , মারুফ হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান সহ চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরই চামড়ার ব্যবসা চলে। লবনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মেঝে, দেওয়াল ও টিন নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলি মেরামত করা প্রায় শেষ হয়েছে। সামনে কোরবানীর ঈদে ভালো ব্যাবসা হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা ।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার চামড়ার দাম অনেক ভাল যাবে। গত তিন চার মাস যাবৎ চামড়ার দাম উর্দ্ধগতি। এখন গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, মহিষের চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, ছাগলের চামড়া ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা এবং ভেড়ার চামড়া ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে । ট্যানারী মালিক বা তাদের প্রতিনিধিরা ঠিকমত নাটোরে এলে ব্যাবসা ভাল হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। মোটামুটি লেন দেন ভাল। যেটুকু বাকি আছে তা কোরবানীর আগেই ট্যানারী মালিকরা দিয়ে দেবে। তবে ২০২০ সালের আগের যে ৬০ কোটি টাকা ট্যানারী মালিকদের কাছে পড়ে আছে সেই টাকা আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে তারা সন্ধিহান। ওই টাকাই তাদের মুল পঁুজি। সেই বকেয়া না পাওয়ায় তারা ভালভাবে ব্যবসা চালাতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, লবনের উৎপাদন বেশী হলেও দাম বেশী। গত কোরবানীতে লবন ৮শ’ টাকা থেকে ৯শ’ টাকায় কিনেছেন। কিন্তু এবার ১৩শ’ টাকা বস্তা কিনতে হবে। সরকারের কাছে লবনের সিন্ডিকেট ভাঙ্গার দাবী জানান। নতুবা লবনের জন্য চামড়ার অনেক ক্ষতি হবে। চামড়া ট্যানারীতে না পেঁৗছা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ রাখার দাবী প্রশাসনের কাছে। তারা দাবী করেন বাহির থেকে যারা চামড়া নিয়ে আসবে তারা যেন হয়রানীর শিকার না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে দাবী জানান তারা।
কোরবানী ঈদের পর রাজশাহী, নওগঁা,পাবনাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৬ টি জেলার চামড়া একসাথে অনেক চামড়া চকবৈদ্যনাথ চামড়া বাজারে আসে। এতে করে চামড়া সংরক্ষনের বেশ সমস্যা হয়। এতে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চামড়া ব্যবসায়ীরা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান তারা যেন নিজ নিজ এলাকায় লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখে এতে করে চামড়ার গুণগত মান ভাল থাকবে।
সাতক্ষিরা থেকে আগত চামড়া ব্যবসায়ী মহাদেব জানান, প্রতি সপ্তাহে সাতক্ষিড়া থেকে কঁাচামাল চামড়া নাটোর চকবৈদ্যনাথ বাজারে বিক্রি করতে আসেন। এখানে বেঁচা-কেনা বেশ ভাল। কিন্তু চামড়ার জন্য প্রয়োজনীয় লবনের দাম বেশী জন্য তারা সমস্যায় পড়েন। তাই তিনি লবনের সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া বাজার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া বাজার। এখানকার চামড়ার গুণগত মান অন্যান্য সব জায়গার চেয়ে ভাল জন্য ট্যানারী মালিকদের এই চামড়া কেনার প্রতি আগ্রহ বেশী থাকে। এবারে প্রায় ৬ লাখ গরুর চামড়া সহ প্রায় ১৬ লাখ পিস চামড়া আমদানী হবে এবং সবই বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেবেন সেই দামেই চামড়া বেচা-কেনা হবে বলেও তিনি জানান। লবনের সরবরাহ ভাল এবং স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি। ঢাকার ট্যানারী মালিকদের নিকট ৬০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে থাকার কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা পূঁজি সংকটে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।