চট্টগ্রামসংবাদ সারাদেশ

স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী গ্রেফতার-প্রেমিক মাসুদুল পলাতক

সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:এম এ আউয়াল :

নোয়াখালীর সেনবাগে স্ত্রীর সহযোগিতায় স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়  স্ত্রী রজ্জবের নেছা রিনা (৩৫) কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) বিকেলে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী  নিহতের স্ত্রী রজ্জবের নেছাকে আদালতে হাজির করেন  মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সেনবাগ থানার এসআই মো: ফারুক। নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইকবাল হোসাইনের আদালতে  স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে  ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নিহতের স্ত্রী রজ্জবের নেছা।
রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা  গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। সোমবার (৭ আগস্ট) পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং  ময়না তদন্ত শেষে রাতে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন  হরিণকাটা ফকিরবাড়ীর মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। সে চট্টগ্রামের ধনিয়ালাপাড়া এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী।
সেনবাগ থানার ওসি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহনা টেলিভিশনকে হত্যা মিশনের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহত মহিন উদ্দিন তার ব্যবসার কাজে প্রায় চট্রগ্রাম শহরে থাকতেন। এ সুযোগে গত দুই তিন বছর ধরে তার স্ত্রী রজ্জবের নেছা বাড়ীর পাশের মো: মাসুদ (৩৫) নামে এক যুবকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে তারা পরস্পর অসংখ্যবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।  বছর খানেক আগে রজ্জবের নেছাকে তার স্বামী ডিভোর্স দেন। ডিভোর্স দেয়ার পর সে তার পিতার বাড়ী নাঙ্গলকোটের অষ্ট্রগ্রামে চলে যায়। তাদের সংসারে কন্যা  মাহি (১৬)  ছেলে রাফি (১৪) ও  রিফাত (১৩) তিন সন্তানের  দিকে তাকিয়ে পুনরায় তাকে সামাজিক ভাবে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসেন।স্বামীর বাড়ীতে  আসার পর স্ত্রী রজ্জবের নেছার চরিত্রের পরিবর্তন  না করে মাসুদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন।
ওসি আরো বলেন, বিভিন্ন সুযোগে সে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে ঘনিষ্ঠ  সম্পর্ক চালাতে থাকেন। স্ত্রীর  পরকীয়া প্রেমিক মাসুদের সাথে নিহত মহিন উদ্দিনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।  এ নিয়ে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ একাধিকবার রজ্জবের নেছার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়। মহিন উদ্দিন বাড়িতে এলে বিষয়টি সহ্য করতে পারতোনা পরকীয়া প্রেমিক। গত তিন চার দিন আগে মহিন উদ্দিন কে হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা  করেন পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ সহ স্ত্রী  রজ্জবের নেছা।
ওসি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী  বলেন, নিহত মহিন উদ্দিন গ্রামের বাড়িতে এলে নিয়মিত গরুর দুধ পান করত। ঘটনার আগের দিন পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ বাজার থেকে ১৪/১৫টি ঘুমের ঔষধ এনে দেয়  রজ্জবের নেছার হাতে।  গত রোববার রাত ১০টার দিকে দুধের সাথে মিশিয়ে সে তার স্বামীকে সবগুলো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়।  ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে সে অচেতন অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলো। একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ ও রজ্জবের নেছা তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠানে নিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ী কুপিয়ে হত্যা করে। লাশ  বাড়ির উঠানে রেখে ঘরে ঢুকে উল্টো নাটক সাজায় ঘাতক স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ভিকটিমের মা রাহেলা আক্তার (৬০) বাদী হয়ে  সেনবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম পিপিএম বার  ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজিব পিপিএম বার এর নেতৃত্বে সেনবাগ থানায় রজ্জবের নেছাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ক্ল্যু উদঘাটিত হয়।  ঘটনার ১৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেফতার করে নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ।বিজ্ঞ আদালত জবানবন্দি রেকর্ডের পর খুনি রজ্জবের নেছাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
 নিহতের মা রাহেলা বেগম সন্তান হত্যায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিনের হত্যাকান্ডে জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেফতার পূর্বক    শাস্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত প্রেমিক মাসুদুল আলম একই এলাকার মুন্সী শরিয়ত উল্যার ছেলে। বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button