তবে আমানত কমলেও, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশ ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮৬.৪৫-৯৩.৪৫ টাকা। চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে রেমিট্যান্সের জন্য ডলারের দাম প্রায় ২০% বেড়ে ১০৭-১০৮.৫০ টাকা হয়েছে।
দেশের ১০টি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য গত বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে প্রায় ৮৮% কমে ২,৪৯৩ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের তুলনায় কম আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছে।
তা সত্ত্বেও, গত মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় এপ্রিল-জুন মেয়াদে এই ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেড়েছে।
এদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইসলামিক পরিষেবা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখেছে, ইসলামী ব্যাংকিংয়ে অতিরিক্ত তারল্য ৬৭% কমেছে।
এই বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে, গত দুই মাসে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য পরিস্থিতির সামান্যই উন্নতি হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, পুরো ব্যাংকিং খাতে গত এক বছরে অতিরিক্ত তারল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য এক বছর আগের ২.০৩ লক্ষ কোটি টাকার তুলনায় চলতি বছরের জুন শেষে আছে ১.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা; যা ১৮% কম।
স্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এওএলআর) এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বজায় রাখার পরে অতিরিক্ত তারল্য গণনা করা হয়। ব্যাংকগুলোকে নগদ আকারে মোট আমানতের ৪% সিআরআর এবং নন-ক্যাশ আকারে ১৩% এসএলআর ধরে রাখতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, একটি ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য তার আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণের উপর নির্ভর করে। যখন কোনো ব্যাংক কম আমানত পায় কিন্তু বেশি ঋণ বিতরণ করে বা বিনিয়োগ করে তখন অতিরিক্ত তারল্য কমে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রায় ১৫,৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে; কিন্তু ব্যাংকগুলো ৩৯,০০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামী ব্যাংকগুলো নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে এ ব্যাংকগুলোর আমানত কমে গেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমায়নি, ফলে কমেছে অতিরিক্ত তারল্য।
এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে পর্যাপ্ত সিআরআর এবং এসএলআর ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেনাল্টির মুখোমুখি হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান টিবিএসকে বলেন, দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাওয়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে; এটি তারল্য কমার প্রধান কারণ।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আলম টিবিএসকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আস্থা ফিরে পেতে এবং অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু গ্রাহক তাদের ব্যাংকে চেক এনক্যাশ করতে বা জমাকৃত অর্থ তোলার জন্য আসছেন এবং গত ৬-৭ মাসে তাদের ব্যাংকে প্রায় ৪ লক্ষ নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ধীরে ধীরে এ সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে আমানত কমলেও, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিকের শেষে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪২ শতাংশ। জুন ত্রৈমাসিকে ব্যাংকগুলো ২২,১৯২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা ২০২২ সালের একই প্রান্তিকে ছিল ১৫,৭১৭ কোটি টাকা।
এ প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশ ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮৬.৪৫-৯৩.৪৫ টাকা। চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে রেমিট্যান্সের জন্য ডলারের দাম প্রায় ২০% বেড়ে ১০৭-১০৮.৫০ টাকা হয়েছে।
এছাড়া, কিছু ব্যাংক এবিবি এবং বাফেদা কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে রেমিট্যান্সব্যাংকে সংগ্রহ করেছে; যা তাদের রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আলম টিবিএসকে বলেন, তার ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রাপ্তি বাড়াতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।
“আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশের রেমিটেন্স প্রেরকদের সাথে প্রচারমূলক মিটিং করেছি। পাশাপাশি, আমরা প্রবাসীদের ঢাকার অভ্যন্তরে পরিবহন সুবিধা বা স্বল্প খরচে ব্যাংকের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছি,” বলেন তিনি।
অন্য একটি ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উচ্চ হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহের কথা স্বীকার করে টিবিএসকে বলেন, “সবকিছু সবসময় আমাদের হাতে থাকে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। কখনও কখনও তারা উচ্চহারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে ডলার ম্যানেজ করার জন্য চাপ দেন। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের বিবেচনায়, আমাদের সেভাবেই ডলার সংগ্রহ করতে হয় এবং উচ্চমূল্যে লেনদেন করতে হয়।”