কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশে এখনো ১১-১২ লাখ টন আলুর মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন সংকট হবে না।
খুচরা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৩৫-৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। একই সঙ্গে আলুর যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো সংকট তৈরি হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার আলুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর একটি মতবিনিময় সভা করে। সভা শেষে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এসব কথা জানান। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সভায় কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশে এখনো ১১-১২ লাখ টন আলুর মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন সংকট হবে না।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে আলুর সংকট নেই। আলুর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এখন যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। বুধবার থেকে ১৫ জেলায় ডিসিদের তত্ত্বাবধানে তদারকি শুরু করা হবে।”
তিনি বলেন, আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকার দুর্বলতার কারণে বিপণনে একটি শ্রেণী কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।
ট্যারিফ কমিশনের উপ-প্রধান মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী আলুর যে উৎপাদন তা চাহিদার তুলনায় ১৪ লাখ টন সারপ্লাস (উদ্বৃত্ত) থাকার কথা। রপ্তানিও হয়েছে গত বছরের তুলনায় অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিন মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এর জন্য কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে পাকা রশিদ জরুরি।”
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, এসোসিয়েশনের সদস্য এবং এর বাইরে যেসব কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে সবার কাছে মিলে প্রায় ১২ লাখ টনের বেশি আলু রয়েছে; যা দিয়ে ডিসেম্বরে নতুন আলু আসার আগ পর্যন্ত কোন সংকট হবে না।
তিনি বলেন, “তবে সরকার যে উৎপাদনের তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়, এবারে আলুর উৎপাদন ৮৫ লাখ টনের বেশি হয়নি। সরকারি দপ্তরগুলো যে রিপোর্ট দিচ্ছে সেটা রিভিউ করা উচিত। অন্যদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনই বলছে, কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুদ গত বছরের তুলনায় দুই লাখ টন কম ছিল। আমরাও দেখেছি স্টোরেজে এবার ২০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা।”
তিনি বলেন, “হিমাগার গেটে মে মাসে আলুর দাম ছিল ২৫-২৭ টাকা কেজি, যেটা এখন ৩৮ টাকা কেজি। এক-দুইদিন পরপর আলুর দাম বাড়ানো হয়েছে। যে আড়তদাররা এটা বাড়িয়েছে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আলু সব খরচ মিলে খুচরায় ৩৫-৩৬ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। এই সময়ে প্রতি কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বাড়তি মুনাফা করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সরকারি দপ্তরগুলো ঢাকায় বসে ফোন করে হিমাগারের তথ্য চান, কিন্তু সেখানে সরেজমিন না গেলে তো এই মনিটরিং হয় না।”
এফবিসিসিআই পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ীরা আলু হিমাগার থেকে ছাড়ছে না। আলুর দাম আরও বাড়বে বলে আটকে রাখছে। তারা আলু না ছাড়লে আমরা অক্টোবর থেকে আলু ছাড়া শুরু করব। তাদের ভাড়া কেটে রেখে আলুর দাম দিয়ে দেব। কোল্ড স্টোরেজে আলু ধরে রাখার এই প্রবণতা থেকে বাজারে অস্থিরতা হচ্ছে।”
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মিয়া বলেন, “কিছু কিছু ব্যবসায়ী বাজারে সুযোগ নিচ্ছে।”