রংপুরসংবাদ সারাদেশ

খানসামায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পোস্ট অফিসের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। ভবনটি মেরামতের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায়। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা আশঙ্কা করেছেন।

 

সরেজমিনে খানসামা পোষ্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে কখনো মাথার উপর কখনো যন্ত্রপাতির উপর খুলে পড়ছে পলেস্তরা। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় বর্তমানে পোস্ট অফিসের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অফিসের ভিতরে গিয়ে ভবনটির জীর্ণদশা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। ছাদ নির্মাণের যে রডগুলো ব্যবহার করা হয়েছে পলেস্তরা খুলে পড়ে সেগুলো সব দেখা যাচ্ছে, রডগুলোতে জাং ধরেছে।

 

অফিসের ভিতরে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অফিসিয়াল কাজ-কর্ম চালাচ্ছেন এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে ঘটতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় কোনো দুর্ঘটনা। সংস্কারের অভাবে ভবনটির গায়ে শ্যাওলা পড়ে গেছে। ছাদের কোনো কোনো স্থানে পলেস্তরা নেই। ভিতর থেকে ছাদের দিকে তাকালে মরিচা ধরা লোহার রডগুলো চোখে পড়ে। ভবনের দ্রুত সংস্কার করা খুব জরুরি।

 

ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে কখনো মাথার উপর কখনো যন্ত্রপাতির উপর খুলে পড়ছে পলেস্তরা। ছবি: মোহনা সংবাদ

 

পোষ্ট অফিসে সেবা নিতে আসা নজরুল ইসলাম জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে পোস্ট অফিসে আসা- যাওয়া করি। প্রতিমাসে পোষ্ট অফিসে আসতে হয় টাকা নিতে কিন্তু সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। কখন উপরের ছাদ ধসে পড়ে।

 

পোস্ট অফিসে সেবা নিতে আসা শেখ নেছারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সরকারি দপ্তরগুলোর খারাপ অবস্থা তা জানতাম কিন্তু এতো পরিমাণ খারাপ তা আমাদের জানা ছিলো না। সরকারি দপ্তরগুলো যে খুবই অবহেলিত, তা এই পোস্ট অফিস ভবনে এলে স্পষ্ট বোঝা যায়। আমরা পোস্ট আসলে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি যে কখন বুঝি ভবনের ছাদ ভেঙ্গে আমাদের উপর পড়ে। যেদিন ভবন ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে তখন সরকারের টনক নড়বে। অতিদ্রুত পোস্ট অফিসের এই ঝুঁকিপূর্ণ মরনফাঁদ ভবনটি ভেঙ্গে আধুনিক মানের একটি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন তা না হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ পোস্ট অফিসে  কোন সেবা নিতে আসবে না।

 

উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. দহিরুল ইসলাম  বলেন, ‘আমরা পোস্ট অফিসে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে আসছি। ছাদের পলেস্টার খুলে পড়ে অফিসের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গরমের সময় আমরা ভয়ে ফ্যান চালু করি না কারণ ফ্যান কখন যে মাথার উপর কিংবা সেবাগ্রহীতাদের মাথার উপর খুলে পড়ে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এমতাবস্থায় আমরা সেবার মানও বাড়াতে পারছি না।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘কার্যক্রমগুলো না করলেই নয় সেগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে আসছি। পোস্ট অফিসের প্রতি সাধারণ মানুষদের আগ্রহী করতে চাইলে দ্রুত পরিত্যক্ত এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে একটি আধুনিক মানের নিরাপদ পোস্ট অফিস ভবন নির্মাণ করা জরুরী। তা না হলে এক সময় সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে সাধারণ মানুষরা পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে নিবেন। কতবার যে ভবনের এমন অবস্থার কথা কাগজে-কলমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র আশ্বাসই এখন আমাদের প্রধান ভরসা।’

 

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল প্রদীপ কুমার জানান, ‘খানসামা উপজেলার পোস্ট অফিসটি জরাজীর্ণ এটা আমরা জানি, এটা আমাদের রিপোর্ট এ আছে। গত অৰ্থ বছরে আমরা বাজেট পাইনি যার ফলে কিছু করতে পারিনি। কেন্দ্র এ বিষয়টি অবগত আছেন। আশা করছি এই অর্থ বছরে কাজ হয়ে যাবে।’

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button