অর্থনীতি

১৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশে তৈরি হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা

মোহনা অনলাইন

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। মার্চে বাজারে গাড়ি ছাড়বে প্রতিষ্ঠানটি।

কারখানা তৈরিতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ কারখানা করতে ৭৯০ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে ১০টি ব্যাংক মিলে। বাকি টাকা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করবেন।

দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানায় ঋণ দিতে দুটি জোট গঠন করেছে ১০ ব্যাংক মিলে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ একর জমির একাংশের ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এই কারখানা। কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এখন চলছে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। আগামী বছরের মার্চের আগেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তৈরি হবে গাড়ির মূল কাঠামো (বডি)। এতে সেডান কার, এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল), মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও বাসের মূল কাঠামো তৈরি করা হবে। এই কারখানা করতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪০ কোটি টাকা দিতে জোট করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী, বিডিবিএল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফএফএল ও বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক।

বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড নামের কারখানায় তৈরি হবে লিথিয়াম ব্যাটারি। এই কারখানাও বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের। কারখানাটিতে তৈরি ব্যাটারি ২, ৩ ও ৪ চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি সোলার, ডেটা সেন্টার, ইউপিএস, বিটিএসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে।

এই কারখানা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা দেবে বিভিন্ন ব্যাংক। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবেন কারখানার উদ্যোক্তারা। এ কারখানা তৈরিতে প্রথম ধাপে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ দিতে ইস্টার্ণ ব্যাংকের নেতৃত্বে জোট করেছে বিডিবিএল, সোনালী, রূপালী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এসব ব্যাংক দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া ম্যাঙ্গো টেকনোলজিস লিমিটেড নামের অপর কারখানায় তৈরি হবে মোটর, মোটর নিয়ন্ত্রণ ও চার্জিংয়ের ব্যবস্থা। এ কারখানা তৈরিতে খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা। আপাতত উদ্যোক্তারাই এই অর্থ জোগান দিচ্ছেন। বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে।

পূর্ণাঙ্গ গাড়ি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে গাড়ির অভ্যন্তরীণ নকশা আমদানি করা। তা আমদানি করে দেশেই বিশ্বমানের গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করবে, তা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের। এতে ১ বছরে ২ চাকার ৬০ হাজার,৩ চাকার ৪০ হাজার ও ৪ চাকার ৩০ হাজার গাড়ি উৎপাদন করা যাবে। এতে কর্মসংস্থান হবে দেড় হাজার মানুষের, পরে প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

গাড়িগুলোর নকশা এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। এসব গাড়ি হবে কানেকটেড কার। অর্থাৎ গাড়িতে চার্জ–সুবিধা, ওয়াইফাই–সুবিধা যুক্ত থাকবে। ফলে গাড়িতে ওঠার পর কেউ কেউ অফিস শুরু করতে পারবেন। এসব গাড়ি চার্জ করার জন্য পাম্পে ব্যবস্থা থাকবে, আবার গাড়ির মালিকেরা নিজ বাড়িতেও চার্জ করতে পারবেন। বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জ–সক্ষমতার ওপর দাম নির্ধারণ করা হবে।

এক চার্জে ২৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন সেডান কারের দাম পড়বে ১২-১৩ লাখ টাকা। তবে এক চার্জে ৩৫০ কিলোমিটার চলা সেডান গাড়ির দাম পড়বে ১৬-১৭ লাখ টাকা।

এক চার্জে ৩৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন এসইউভি অথবা জিপের দাম পড়বে ২৩-২৫ লাখ টাকা। ৪০০ কিলোমিটার চলা গাড়ির দাম পড়বে ২৮-৩০ লাখ টাকা। এক চার্জে ২৫০ কিলোমিটার চলবে, এমন ৭ সিটের মাইক্রোবাসের দাম পড়বে ২০-২২ লাখ টাকা, ৩৫০ কিলোমিটার চলা গাড়ির দাম পড়বে ২৫-২৬ লাখ টাকা। ৪-৫ লাখ টাকায় মিলবে ৩ চাকার গাড়ি, যা এক চার্জে চলবে ২০০-২৫০ কিলোমিটার। কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, বাসের দাম হবে ১৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে।

এসব গাড়ি বাজারে ছাড়তে ইতোমধ্যে সব ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে করছাড়–সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ নীতিমালা, বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button