ঢাকাসংবাদ সারাদেশ

বাধার মুখে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের ফোর প্যাকেজের কাজ

মো. জামাল আহমেদ

দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঢাকা সিলেট করিডোর কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে নরসিংদীর মারকো ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত বালু সরবরাহের জন্য মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্প কাজ পায়। তবে কাজের শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছে মহাসড়ক বিনিয়োগ প্রকল্প সিক্স লেনের প্রকল্পের কাজ।
সড়কের বালু সরবরাহে বাধা এবং আনলোড ড্রেজার ভাংচুর ও শ্রমিদের উপর স্থানীয় লোকজনের হামলার কারণে কাজ শুরুর তিনদিনের মাথায় বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের ম্যানেজারের কাছে রায়পুরার কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ও লোকজন মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় কাজের শুরুতেই দেয়া হয় বাধা এবং শুক্রবার (১৫সেপ্টেম্বর) বিকেলে ড্রেজারে বালু আনলোডের সময় হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এসময় ড্রেজারের ম্যানেজার ও শ্রমিকদের মারধর করে নগদ টাকা ও তেলে ড্রাম লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় রায়পরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঢাকা সিলেট করিডোর সড়ক বিনিয়োগ প্রকল্প সিক্স লেনের কাজটি ১৩টি প্যাকেজের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজের কাজের দায়িত্ব পান। প্যাকেজ নং: ডিএস-৪ এর আওতায় বালু সরবরাহ সহ ধাপে ধাপে সড়কের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। প্যাকেজ নং: ডিএস-৪ এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় (১১,৮৭৫৭৯৭৫৫/-) এক হাজার একশত সাতাশি কোটি সাতান্ন লাখ সাতানব্বই হাজার সাতশত পঞ্চান্ন টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ৪বছর।
বালু সরবরাহের জন্য হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্প ও নৌ পরিবহনের কার্যাদেশ প্রদান করেন। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ওই কাজের অংশ হিসেবে নরসিংদির মারকো ফিলিং স্টেশন থেকে ভৈরব ব্রীজ পর্যন্ত বালু সরবরাহের জন্য মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের মালিক মো: মিন্টু মিয়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র ব্রীজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া নদীর পাড়ে বালু সরবরাহের কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতেই রায়পুরার মাহমুদাবাদ, রামনগর, নীলকুঠি ও মির্জাপুরের কিছু বালু ব্যবসায়ী ও কতিপয় লোকজন বালু আনলোডে বাধা প্রদান করে এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তাদের চাহিদার চাঁদার টাকা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন দা বল্লম ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে এবং আনলোড ড্রেজার ভাংচুর, টাকা ও তেল লুটপাট করে ড্রেজারের ম্যানেজার ও শ্রমিকদের উপর হামলা ও মারধর করে আহত করেন। হামলা থেকে বাঁচতে শ্রমিকরা নদী সাঁতরিয়ে ভৈরব প্রান্তে চলে এলে তারা নৌকা নিয়ে এসে পুনরায় মারধর করে চলে যায় বলে অভিযোগ করা  হয়।
বালু আনলোডে বাধা, হামলা, ভাংচুর ও মারধরের ঘটনায় ওইদিন রাতেই মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের ম্যানেজার নাঈম আলসিন বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
এজাহারে মির্জা ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২৯জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এঘটনায় অভিযুক্ত মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমি কোন ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বে জড়িত নয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমার এলাকার বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভৈরবের মিন্টু মিয়ার সাথে আলোচনা করেছি। তাদের সাথে নিয়ে যেন কাজ করে। মিন্টু মিয়া যে টাকায় ফুটে বালু সরবরাহ করবে তার চেয়ে বালুর রেইট নদীতেই বেশি। আমি বিষয়টি সুরাহা করতে না পাড়ায় আমাদের এমপি রাজিউদ্দিন রাজু মহোদয়কে অবগত করেছি। আগামীকাল রোববার এবিষয়ে এমপি সাহেব আলোচনায় বসবে।
তিনি বলেন, রোববারের আগে যেন ড্রেজারে বালু উত্তোলন না করে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এর আগে বালু আনলোড করায় স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দেয়ার খবর শুনে তাদেরকে ফোন করে ফিরিয়ে আনি আমি। কোন ভাবেই সরকারের উন্নয়ন কাজে যেন বাধা না দেয় বলেছি। তারপরও যদি কেউ সরকারি কাজে বাধা দেয় সেটা তাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে। তবে দুঃখের বিষয় হলো আমি ঢাকায় থাকি, অথচ আমাকে মামলায় মিথ্যা অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এবিষয়ে ভৈরব নৌ পুলিশ ইউনিটের ইনচার্জ (এস আই) রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে নদীতে এসে কিছু লোকজন ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। ড্রেজার ও শ্রমিকদের উপর হামলা করেছে অভিযোগ পেয়ে আজ শনিবার সকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরকারি কাজে কেউ বাধা দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের মালিক মোশাররফ হোসেন মিন্টু বলেন, ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের কাজের জন্য বালু সরবরাহ করছি। রায়পুরার কিছুলোক কাজকে বাধাগ্রস্থ করতে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় আমার ড্রেজার ভাংচুর লুটপাট ও শ্রমিকদের মারধর করে আহত করে। এঘটনায় রায়পুরা থানা ও ভৈরব থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
এবিষয়ে ঢাকা সিলেট করিডোর মহাসড়ক বিনিয়োগ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শের শাহ ফরিদ বলেন, ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের কাজের তিনটি প্যাকেজ পেয়েছে হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। প্যাকেজ ৪-এর আওতায়   ভৈরব থেকে মারকো ফিলিং স্টেশন নরসিংদী পর্যন্ত এরিয়া। ব্রহ্মপুত্র নদের মাহমুদাবাদ পুরাতন ফেরিঘাটে প্রকল্পের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নিয়েছি। রাস্তার কাজের জন্য সরকারি বালু মহাল থেকে বালু সরবরাহ করছি। স্থানীয় হিসেবে যাচাই-বাছাই করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ভৈরবের মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পকে বালু সরবরাহের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বালু আনলোডের জন্য মিন্টু সাহেব ড্রেজার ও পাইপ লাইন স্থাপন করে বালু আনলোডের সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে রায়পুরা স্থানীয় লোকজন এসে হামলা চালিয়ে ড্রেজার ভাংচুর ও শ্রমিকদের মারধর করেন এবং ড্রেজারের ম্যানেজারকে নদীতে ফেলে দেয়। অনেক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। আমি ঘটনা শুনে ওসি সাহেবকে ফোন করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠায় এবং আমিও ঘটনাস্থলে যায়।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন মুলক কাজের শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছি। আমাদের ক্যাম্পের কাজের বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকারের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ জানাবো।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button