শ্রীপুরে গরু চুরির হিড়িক! লোডশেডিংকে দায়ী করে চেয়ারম্যানের ফেসবুক পোস্ট!
আলফাজ সরকার আকাশ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে গরু চুরির ঘটনা। গরুর মালিকরা রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না গরু চুরি। গত ২০ দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০টির মতো গরু চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। গরু চুরির ঘটনায় কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেলেও চুরি ঠেকাতে কিংবা চুরি হওয়া গরু উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে প্রায় রাতেই উপজেলার কোথাও না কোথাও গরুসহ ছোট-বড় চুরির ঘটনা ঘটছে। যেগুলোর বেশীর ভাগ ঘটছে উপজেলার গোসিংগা এলাকায়। এছাড়াও গাজীপুর, মাওনা ও বরমী এলাকায় চোরের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে খামারিদের। তাদের অভিযোগ, মধ্য রাতে উৎপাদন ঘাটতি ও বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে বিদ্যুৎ অফিস বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় এসকল চুরির ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, উপলক্ষ ছাড়াই উচ্চ শব্দে গানবাজনার সুযোগে ছিঁচকে চোরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুতের লোডশেডিংকে দায়ী করে পোস্ট দিয়েছেন উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান শাহীন। তিনি লিখেন,
“গরু চুরি হয় আনুমানিক রাত ২টা ৩০মিঃ থেকে ৪টা/৪:৩০টার মধ্যে। শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের একাংশ নারায়নপুর,লতিফপুর, গোসিংগা, বাউনীসহ আরো কিছু জায়গা বিদ্যুৎ পরিচালনা করেন কাপাসিয়া বিদ্যুৎ অফিস। ঠিক এই সময়টা ধরেই প্রতিরাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
-চেয়ারম্যান গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদ”।
এ সম্পর্কে চেয়ারম্যান শাহীন মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “আশঙ্কাজনক ভাবে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। পুলিশ রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত বাজারের দিকে টহল দিতে দেখি কিন্তু পরে আমরা তো চলে যাই, তারা থাকে কি থাকেনা তা জানিনা। গরু চুরির এ বিষয়টি আপনাদের লেখালেখি করা উচিত”।
উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে গোসিংগা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ৬ টি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ রাতের উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হেরা পটকা গ্রামের আব্দুল আব্দুল হালিমের ছেলে ইব্রাহিম মুন্সি নামের এক লোকের ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৩টি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। গত সপ্তাহে বরমী ইউনিয়নের তাঁতিসুতা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মহসিন মিয়ার ১টি গরু চুরি হয়। পরে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের লতিফ মীরের ছেলে কামরুল ইসলাম মীরের বাহমা জাতের ১টি, শাহী ওয়াল জাতের ১টি ষাঁড় ও ৩টি গাভী চুরি হয় যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৭ লাখ টাকা।
গরুর মালিক কামরুলের ভাই দেলোয়ার বলেন, “থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর দারোগা তানসেন আসছিল। গরুর খোঁজ পেলে উনার সাথে কথা বলতে বলেছে। কিন্তু পরে আর খবর নেই”। যদিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ প্রতিবেদককে বলেন, “কৃষককে হাটবাজারে খোঁজ খবর নিয়ে তথ্য দিতে বলেছি। আমরা ক্লু পেলে তারপরই অভিযান চালাবো। আমরা তো আর গণক না যে কোথায় আছে বলে বের করবো”।
মধ্য রাতে লোডশেডিং বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম রফিকুল আজাদ বলেন, “উর্ধতন কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো বলতে নিষেধ করেছে। আর চুরির ঘটনাগুলোর এলাকা কাপাসিয়ার অফিস বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়। আপনি উনাদের সাথে যোগাযোগ করুন”।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাপাসিয়া জোনাল অফিসের এজিএম রিফাত ভূইয়া মুঠোফোন জানান, আমাদের চাহিদা ১৭ মেগাওয়াট কিন্তু পাচ্ছি ১০ মেগাওয়াট, যা দিয়েই কভার দিতে হয়। সে কারনে গোসিংগা এলাকায় রাতে লোডশেডিং দিয়ে থাকি।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোহাম্মাদ ছানোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) মুঠোফোনে মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “প্রতি রাতেই নিয়মিত ভাবে পুলিশের টহল চলছে। কাপাসিয়ায় গরু চুরির একটা ঘটনা শুনেছি কিন্তু শ্রীপুরে এমন ঘটনা আমার জানা নেই। এমন হলে পুলিশের পাশাপাশি গরুর মালিকদেরও সতর্ক থাকতে হবে”।
রাত ১০টা-১১টার পর পুলিশের টহল দেওয়া নিয়ে চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন,“পুলিশ তো আর চেয়ারম্যানের বাড়িতে টহল দিবেনা”। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বিপিএম এর মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসআ্যাপ বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।