জনবল সংকট, ধার করা জলযান দিয়ে চলছে ১০ জেলার একমাত্র ‘বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন’
শেখ শামীম
জনবল সংকট আর ধার করা জলযান দিয়ে চলছে ১০ জেলার একমাত্র ‘বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন’। নৌ পথে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব পড়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অধীনে থাকা এই নৌ ফায়ার স্টেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পরও পূর্ন জনবল ও নিজস্ব জাহাজ না থাকাসহ নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে স্টেশনটি।
আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত বরিশালের একমাত্র জলযান ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে ধার করা ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে স্টেশনটি। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত ১০ জেলার একমাত্র নৌ ফায়ার স্টেশনটি।
জানা যায়, দক্ষিণের ১০ জেলা (বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী) জেলার ১২শ’ কিলোমিটার নৌপথের জন্য রয়েছে এই একটি মাত্র স্টেশন। স্টেশনটি কিশোরগঞ্জের নিকলী ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত জাহাজ ‘অগ্নিযোদ্ধা’ দিয়ে সচল রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় সেটি নিকলীতে ফেরত নেওয়া হলে অচল হয়ে যাবে বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন। তাছাড়া ‘অগ্নিযোদ্ধা’ চালানোর জন্য যে জনবল দরকার তাও নেই এ স্টেশনে।
অগ্নিযোদ্ধা’র একমাত্র মাস্টার ড্রাইভার এনামুল হক বলেন, জাহাজটি চালাতে একজন মাস্টার ড্রাইভার ও একজন ইঞ্জিন ড্রাইভার প্রয়োজন। অথচ দীর্ঘ দুই বছর ধরে জাহাজটিতে ইঞ্জিন ড্রাইভার নেই। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একার পক্ষে এ জাহাজটি পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অধিকাংশ সময় স্পিড বোটের ড্রাইভার মোঃ রিপনকে সাথে নিয়ে যাই। রিপনও এ জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ততটা দক্ষ নয়। তাকে শিখিয়ে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। যা অনেকটা কষ্ট সাধ্য। তাছাড়া স্পিড বোটের ড্রাইভার রিপনকেও সামলাতে হয় অনেক দিক। এই স্টেশনের ৩টি স্পিড বোট রিপনকে একাই চালাতে হয়। মাঝে মাঝে একই সময়ে দুটি দুর্ঘটনা ঘটলে বিশাল এই জলসীমায় একদিক সামলে আরেক দিকে যেতে যেতে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিভাগীয় এই নৌ ফায়ার স্টেশনে জনবল বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন সূত্রে আরো জানা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজটি। কিন্তু কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ ফায়ার স্টেশনটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় সেটি নিয়ে রাখা হয় পটুয়াখালীতে। সেখান থেকে জাহাজটি ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা হয় বরিশাল স্টেশনে। তবে নিকলী স্টেশন পুরোপুরি প্রস্তুত হলে ফেরত যাবে ‘অগ্নিযোদ্ধা’। তখন বরিশালে নদী পথে কোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধার অভিযানের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ বরিশালের জন্য বরাদ্দকৃত ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেটি মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া যেসব ছোট ছোট স্পিড বোট রয়েছে তা দিয়ে অগ্নিকান্ডের মত ঘটনা মোকাবেলা করা অসম্ভব।
স্টেশন সূত্র জানায়, বরিশালে ১৯৬৪ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যাত্রা শুরু হয়। ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি ১৯৯৩ সালে নির্মিত হয়। ফলে বর্তমান প্রযুক্তির তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এছাড়া কুয়াশা ভেদ করে চলার জন্য রাডারের ব্যবস্থাও নেই জাহাজটিতে। এর মধ্যে গত ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠিতে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অগ্নিকান্ড ঘটে। অভিযান ১০ লঞ্চে আগুন লাগে। বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র ১৭ কিলোমিটার। কিন্তু ‘অগ্নিঘাতক’ সেখানে পৌঁছাতেই সময় নেয় ১২ ঘণ্টা। এরপর থেকেই জাহাজটি ফায়ার সার্ভিসের অঘোষিত ‘অচল জাহাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
জলযানের পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, বিশাল এই জলসীমার জন্য আরও জলযানের পাশাপাশি জনবল প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজটি পরিচালনার জন্য যে জনবল প্রয়োজন তাও নেই। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিন ড্রাইভার নেই। এসব সংকট মোকাবেলায় একাধিক সভা সেমিনারে আলোচনা করে মহাপরিচালক ও পরিচালকদের জানানো হয়েছে। অচিরেই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। সেটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই কার্যক্রম চালিয়ে রাখতে কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে নিকলী নৌ ফায়ার পুরোপুরি স্টেশনটি চালু হলে এ জলযানটি ফেরত দেয়া হবে।