গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের হামলায় মায়ের কোলে থাকা ফাহিতা নামের দুই বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ওই শিশুর বাবা-মা দুজনই আহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহত শিশু ফাতিহা (২) শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে। হামলায় লিয়াকত আলীর ছেলে শিশুর বাবা আব্দুস সাত্তার (৪০) ও তার স্ত্রী কুলছুম (২৪) আহত হয়েছেন। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
৩৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি লাঠি হাতে কুলছুম বেগমের ওপর হামলা করছে। এসময় ওই লাঠির আঘাত শিশুটির মাথায় লাগলে শিশুসহ মা ও বাবা আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
নিহত শিশুর স্বজনদের দেওয়া তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী লাল মিয়ার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলায় কিছুদিন পূর্বে প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিয়ে গ্রাম্য সালিশে বসে। সালিশ শুরুর একপর্যায়ে জমির কাগজপত্র দেখা শুরু করে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন দা-লাঠি এনে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এসময় মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুটি হামলাকারীদের আঘাতে গুরুতর জখম হয়। পরে স্থানীয়রা শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি।
হামলায় প্রতিপক্ষের ফরহাদ (৩২), আব্দুর রশিদ (৫০), হুমায়ুন (৩০), খোরশেদ (৪৫), জাকির হোসেন (২০), আকাশ (২০), মেহেদী হাসান (১৮), ইসলাম উদ্দিন (৭০), লাল মিয়া (৭৫) ও তুতু মিয়া (৪৫) জড়িত বলে দাবী করেন নিহত শিশুর চাচা মোক্তার হোসেন।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য সালিশে বসা হয়। জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলাকালে উভয় পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠলে আমরা তাদের থামিয়ে দেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই প্রতিপক্ষ লাল মিয়ার নেতৃত্বে দা লাঠি নিয়ে পুনরায় হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধরের একপর্যায়ে শিশুর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।”
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবিনা আক্তার বলেন,” হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই শিশুটি মারা যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল। সে মারা যাওয়ার পরপরই আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।”
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথেই পুলিশ পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশের অভিযান চলমান। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।