বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্র ঘোষিত শান্তি সমাবেশ হবে আগামী ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট মোশাররফ চত্বরে। অপরদিকে এর আগের দিন অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে ১ দফা দাবি আদায়ে রোডমার্চ হবে ৫ অক্টোবর।
ইতোমধ্যে দুই দলের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা চলছে। এই সভাকে কেন্দ্র করে মিরসরাই রাজনীতি উত্তপ্ত। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার আজমপুর বাজার এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এ সংঘর্ষে রায়হান হোসেন রুমন নামে এক কিশোর নিহত হয়, আহত হয়েছে ২০ জনের অধিক। নিহত কিশোর উভয় দলের বলে দাবি করেন। পরেরদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন নিহত রুমনের মা খালেদা আক্তার।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত রুমনের মা খালেদা আক্তার বাদি হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০-৭০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া পরেরদিন আরেকটি মামলা দায়ের করে ছাত্রলীগ নেতা। সংঘর্ষ পরবর্তীতে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ও সাঈদ চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালায় বলে জানা যায়।
সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সভা চলছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সভা আয়োজন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের জেরে গত মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের সুফিয়া রোডস্থ নুরজাহান কমিউনিটি সেন্টারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই কমিউনিটি সেন্টারে নিজের সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম দিদার ও ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দিন।এতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী সমর্থক আহত হয়।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর, জোরারগঞ্জ থানার বিএসআরএম গেইট সংলগ্ন মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে বাধা ও ভাংচুরের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বারইয়ারহাট পৌরসভা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউসুফ।
অপরদিকে আগামী ৫ অক্টোবর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির রোড মার্চ ও মীরসরাইতে সমাবেশ স্থান নির্ধারণ করতে মীরসরাই, বারৈয়ারহাট এবং বড়তাকিয়া বাজর পরিদর্শন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জননেতা মোহাম্মদ শাহজাহান। এসময় উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রোড মার্চ সফল করার জন্য দলীয় কোন্দল ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিটি ইউনিটে ছাত্রদল যুবদল ও জাতীয়তাবাদী দলের পৃথক পৃথক কর্মী সমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ করছে তারা কখনো কখনো হামলা শিকার ও হচ্ছে সরকারদলীয় লোক দ্বারা।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের হাবিলদার বাসায় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবলুর বাড়িতে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় হামলা চালায় ইউনিয়ন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্রদল ও যুবদল বেশ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। প্রতিটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলেই বাংলাদেশের রাজনীতি হয় উত্তপ্ত আর বৈরুত নগরীকে স্মরণ করে দেশের জনগণ। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, অথচ তারা পদে পদে উপেক্ষিত। সংঘাত বা প্রাণহানী কোন স্থায়ী সমাধান নয়।
শিক্ষাবিদ; রাজনীতি বিশ্লেষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংগঠন জানিপপের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, চারদিক থেকে যেভাবে চাপ এবং দুঃসংবাদ ধেয়ে আসছে তাতে হয়তো আগামী অক্টোবর স্বাভাবিক সময় হবে না।