দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেল। তবে তা ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলার। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ৩৮ কোটি ডলার ও নিট রিজার্ভ কমেছে ১৯ কোটি ডলার।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি ব্যয় পরিশোধের দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকায় এর ক্ষয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো নিজস্ব উদ্যোগে ডলারের সংস্থান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্ত হতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও দেশের সুনাম ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে ব্যাংকগুলোর কাছে। এতেই কমে যাচ্ছে রিজার্ভ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হজার ৬৬৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে রিজার্ভ কমেছে ৩৮ কোটি ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে নিট রিজার্ভ কমেছে ১৯ কোটি ডলার।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে তা কমে যাচ্ছে। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার। গত এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের ১৮ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৮১১ কোটি ডলার। এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) অব্যাহতভাবে রিজার্ভ কমে যাওয়াকে উদ্বেগজনক মনে করে। রিজার্ভ ধারণের তারা যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল তার মধ্যেও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে আগামী নভেম্বরের শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে যাবে। এ ছাড়া আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে আরও ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে ডলার সংস্থান করার জন্য বলা হলেও তারা পারছে না। কারণ, গত জুনের পর থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিম্নমুখী। রপ্তানি আয়ের ডলার বেশিরভাগই রপ্তানিকারকরা ব্যবহার করছেন। রেমিট্যান্স বাবদ যে ডলার আসে সেগুলো দিয়ে এখন সরকারি খাতের জরুরি পণ্য আমদানি হচ্ছে। বাণিজ্যিক বা অন্য খাতের পণ্য আমদানিতে এখন ডলারের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া আগে নেওয়া বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এগুলোর জন্যও বাড়তি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গত বুধবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে ৩৮২ কোটি ডলার। এর আগে গত অর্থবছরে বিক্রি করেছিল ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার। ব্যাংকগুলো এসব ডলার নিয়ে আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছে।