প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আনতে সব ব্যাংকই ডলারের দাম অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ বেশি দিতে পারবে। এতে প্রবাসী আয়ে মার্কিন ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১১২ টাকা ৭৫ পয়সা। রোববার (২২ অক্টোবর) থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হবে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের এই নতুন দর নির্ধারিত হয়।
তবে রপ্তানি আয়ের ডলারের দর আগের মতো ১১০ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানিতেও ডলারের দাম আগের মতো ১১০ টাকা ৫০ পয়সা রয়েছে।
দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসে বৈধ পথে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় আসে, যা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিলে এত কম প্রবাসী আয় এসেছিল। ওই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার।
এদিকে রেমিট্যান্স পাঠানোর দুই দিনের মধ্যে প্রবাসীর মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী, সন্তান কিংবা নির্ধারিত ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর হিসাবে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মতে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ নির্ধারিত ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর হিসাবে দ্রুত সময়ে জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কিছু ব্যাংক সেই নির্দেশনা মানছে না। ফলে প্রবাসীর পাঠানো অর্থ পেতে দেরি হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনে নিয়োজিত সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- প্রবাসী রেমিট্যান্সের অর্থ বেনিফিশিয়ারির (সুবিধাভোগীর) নিকট বিতরণের নিয়ম সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে না। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়সীমা দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রবাসী রেমিট্যান্সের অর্থ যথাযথভাবে বেনিফিশিয়ারির নিকট বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বৈধ পথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে আশানুরূপ রেমিট্যান্স পাচ্ছে না দেশ। আগের ধারাবাহিকতায় চলতি মাসেও নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। সবশেষ ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অক্টোবরের প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৭৮ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। দৈনিক আসছে ৬ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। আর সবশেষ সেপ্টেম্বরে আসে ১৩৪ কোটি ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।