বরিশালসংবাদ সারাদেশ

ভোরের কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আমেজ

মোঃ নুর উদ্দিন

নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পিরোজপুর জেলা। এ জেলাতে শরতের প্রথমেই শীতের আমেজ অনুভব হচ্ছে। দিনে গরম আবহাওয়া থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। রাতভর শিশির পড়ছে টিপটিপ করে।

খোলা মাঠে দুর্বা ঘাসের উপর চিকচিক করছে শিশির ফোটা। ভোরে ফসলের মাঠ, সবজি ক্ষেত ভরে যায় শিশিরে।

আবহমান বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে আবারও শুরু হয়েছে ঋতুর পালাবদল। আবারও পাল্টাচ্ছে প্রকৃতি ও জীবন। ছয়ঋতুর বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জিতে এখন চলছে কার্তিক মাস। কার্তিক-অগ্রহায়ণ এ দুই মাস বাংলায় হেমন্তকাল।

হেমন্তকে বলা হয় অনুপম ও অপরূপ রূপের ঋতু। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না। এ ঋতুতেই স্বপ্ন দেখেন বাংলার কৃষক-কৃষাণী। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে ওঠে শীতের আগমনী বার্তা।

মাঠের পাকা সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলার দৃশ্য, কৃষক-কৃষাণীর আনন্দ সবই হেমন্তের রূপের অনুষঙ্গ। এ যেন হেমন্তেই শীতের হাতছানি। এ ঋতুতে পিরোজপুর সদর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব।

বর্ষা আর শরতের বৃষ্টির জলধারা হেমন্তে শুকাতে থাকে। মাছ ভাতে বাঙালি হেমন্তকালে জাল, বর্শা, পলো ও বড়শি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। গ্রামের গেরস্থ কর্তা ঘরে ফেরে ডুলাভর্তি মাছ নিয়ে। চোখ আটকে যায় শুকনো জলাশয়ে ঝিমানো কচুরিপানার বেগুনি-শাদা ফুলকলিতে।

এদিকে দিনে গরম ও রাতে শীতের কারণে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলায়র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। বিশেষ করে শিশু ও বেশি বয়স্করা সর্দি, কাশি,নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
অপরদিকে উপজেলার একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, রাতে কুয়াশা ও দিনের বেলায় গরম পরাতে ফসলি জমিতে পোকার আক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। তবে সদর উপজেলা কৃষি অফিস আমাদের পোকামাকড় ও বালাইনাশক স্প্রে পরামর্শ দিয়েছেন।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: রাজীব পাইক বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত অনেকেই ভাইরাসজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ও ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি পাচ্ছি। বিশেষ করে বর্তমানে শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। শিশু অসুস্থ হলে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে এবং নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠাণ্ডা না লাগে। তাদের ধুলাবালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। সপ্তাহ দুয়েক অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে না দেওয়াই উত্তম। শিশু একটানা তিন দিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, এ সময়টাতে ফসলি জমিতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। যে কারণে আমরা আগে থেকেই সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রা, সঠিক সময় ইত্যাদি নির্ধারণের পর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পরামর্শ দিয়েছি কৃষকদের। পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে বালাইনাশক স্প্রে করারও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে ঘুরে ঘুরে কার কি সমস্যা তা দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেকারণে উপজেলায় আগাম শীত ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে পোকামাকড়ের উপদ্রবে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button