একটি কুকুরের সাহায্যে খুনি পর্যন্ত পৌছে গেল পুলিশ। নিহত আশা দেবীর পালিত কুকুর খুনের সময় একেবার চুপচাপ ও শান্ত ছিল এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় খুনী আশা দেবীর পূর্বপরিচিত। এরপর তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আশা দেবীর পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে শিবগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত যুবকের নাম নয়ন ইসলাম। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার বানাইল পশ্চিমপাড়া এলাকার রমজান আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর রাতে নিজ বাড়ি থেকে ভজন মোহন্তের স্ত্রী আশা দেবীর গলায় ওড়না পেচানো মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আশা দেবী আনসার সদস্য ছিলেন এবং বানাইল উত্তরপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, আশা দেবী এবং অভিযুক্ত নয়ন প্রতিবেশী। প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে আশা দেবীর সাথে অভিযুক্ত নয়ন এর মাঝে মধ্যেই দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এভাবে চলাকালে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়। এর মধ্যে গত তিন মাস আগে নয়ন অন্য একজন নারীকে বিয়ে করে। তারপর থেকে আশা দেবীর সাথে আসামী নয়ন মেলামেশা করা বন্ধ করে দেয় এবং এটি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ তৈরী হয়। তখন অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে নয়ন ওৎ পেতে থাকেন। এর মধ্যে মন্দির থেকে পোশাক পরিবর্তন করার জন্য নিজ বাড়ীতে যাওয়ার পথে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তারা পাম্পের গেটের সামনে আশা দেবীর সাথে নয়নের দেখা হয়। আশা দেবী তার বাড়ির দিকে রওনা দিলে অভিযুক্ত নয়নও আশা দেবীর পিছে পিছে তার বাড়ির দিকে যায়।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে আশা দেবী বাড়িতে প্রবেশ করে মেইন গেইট বন্ধ করে দেয়। ওই সময় আশা দেবীর বাড়িতে কেউ ছিল না। সবাই পূজা মন্ডপে ছিল। সেই সুযোগে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর বাড়ির পিছনের ইটের প্রাচীর টপকিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তার শয়ন ঘরে প্রবেশ করে। তখন পূজায় যাওয়ার জন্য আশা দেবী তার পরিহিত আনসার ভিডিপি’র পোষাক চেঞ্জ করছিল। অভিযুক্ত নয়নকে শয়ন ঘরে দেখে আশা দেবী রেগে যান। পরে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীকে ফুসলিয়ে আশা দেবীর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করে। অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর বিছানায় শুয়ে থেকে কিভাবে তাকে হত্যা করা যায় সেই চিন্তা করতে করতে অভিযুক্ত নয়ন আশা দেবীর দুই হাত পিছন দিক হতে মুঠি করে ধরে। পরে খাটের পাশে সোফায় থাকা মোবাইল চার্জারের ক্যাবল আশা দেবীর মুখের মধ্যে পেচিয়ে দিয়ে পাশে থাকা ওড়না দিয়ে আশা দেবীর গলা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং তার লাশ সোফার পাশে ফেলে রেখে অভিযুক্ত নয়ন বাড়ির পেছনের ইটের প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ২৫ অক্টোবর রাতে আসামি নয়নকে গ্রেফতার করা হয়। পরে নয়ন আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।