যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সম্প্রতি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শিগগিরই রপ্তানি বাড়বে বলে আশাবাদী নন পোশাক খাতের রপ্তানি উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী বৈদেশিক বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহও কমে শীর্ষ থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমেছে। কমে গেছে বৈদেশিক অনুদান আসার প্রবণতাও।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগও কমেছে। সামগ্রিকভাবে কমেছে দেশটি থেকে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার প্রবণতাও। এর মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমছে, সামান্য বেড়েছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত গত ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩.০৫ শতাংশ কম। এ সময় মোট ২৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। এই চিত্রের বিপরীতে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। অপ্রচলিত বাজারেও রপ্তানি বেড়েছে এ সময়। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো অপ্রচলিত বাজারে গত চার মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশের মতো। রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। দুই বছর আগে মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ২২ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অক্টোবর পর্যন্ত এ হার ১৮ শতাংশের কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ১০.৪১ শতাংশ এবং মোট রেমিট্যান্স আসার মধ্যে অবস্থান চতুর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। মানবাধিকার ও নির্বাচন ইস্যুতে ইতোমধ্যে ভিসানীতি আরোপ করেছে। এর পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার হরণ করলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে ওইসব বিষয়ও জড়িত। একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের উৎস। দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশ ছিল এক সময়। এছাড়া বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশটির অবস্থান শীর্ষ কাতারে রয়েছে। বৈদেশিক ঋণের অন্যতম উৎস যুক্তরাষ্ট্র। এসব খাতে দেশটি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশে ডলারের প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, দেশটি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশে ডলারের প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তখন ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।