হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম এটি। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। একসময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু, আধুনিকতার কারণে এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি।
হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বানানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয় এটি। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে, তবে খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা এই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রতি।
বাংলাতে যেমন অনেকগুলো নাম এই খাবারটির তেমন ইংরেজিতেও এর অনেক নাম যেমন: কটন ক্যান্ডি, ফেয়ারি ফ্লস, ক্যান্ডি ফ্লস বা স্পুন সুগার । শুধু আমাদের দেশেই নয় হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার চল বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। এর জন্মই হয়েছিল সুদূর আমেরিকায়। আজ ৭ ডিসেম্বর , হাওয়াই মিঠাই দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনটি ‘জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।
কটন ক্যান্ডির নাম প্রথম ব্যবহার করে মার্কিন দন্ত জোসেফ ল্যাসকক্স। মূলত দাঁতের চিকিত্সা শেষে রোগীর ভালো অনুভূতি হওয়ার জন্যই এটি খাওয়ার অনুমতি দিতেন। অন্য ক্যান্ডি খাওয়ার পর তা দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকে। দাঁত ফ্লস না করলে নানা সমস্যা হয়। তাই জোসেফ ক্যান্ডির বিকল্প হিসেবে কটন ক্যান্ডি খেতে বলতেন।
হাওয়াই মিঠাইয়ের জন্ম অনেক আগে। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, পনেরশ শতকে এই ক্যান্ডি প্রথম বানানো হয়। যা বানিয়েছিলেন একজন ইতালীয় রাঁধুনি। তিনি চিনির সিরাকে কাঁটা চামচ দিয়ে টেনে সুতার মতো তৈরি করতেন। তবে ওই সময় এর নাম হাওয়াই মিঠাই ছিল না।
ষোড়শ শতকে ভেনিস ভ্রমণকালে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় হ্যানরিকে বিভিন্ন মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। সেখানে ছিল চিনির পেঁচানো সুতা। ওই সময় হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কাঁটা চামচের মাথায় চিনির সিরা লাগিয়ে টেনে পেঁচিয়ে সুতা মতো বানানো হতো।
১৯০৪ সালে মরিসন এবং ওয়ার্টন প্রথম হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র আবিস্কার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ডস ফেয়ারে হাওয়াই মিঠাইয়ের দোকান দেন তারা। মেলায় সবার দৃষ্টি ছিল সেখানেই। প্রায় ৭০ হাজার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন তারা।
বর্তমান সময়ের যে হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায় তার উদ্ভাবন হয়েছে গত শতাব্দীতে। ১৯৪৯ সালে গোল্ড মেডেল প্রোডাক্টস হাওয়াই মিঠাই তৈরির উন্নত যন্ত্র নিয়ে আসে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র তৈরি হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকেই।