রাজশাহীসংবাদ সারাদেশ

নাটোরে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা, হামলার শঙ্কায় ৪২পরিবার

মোঃ রাশেদুল ইসলাম, নাটোর 

সেচ কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে, নাটোরের সিংড়া উপজেলার, হাতিয়ানদহ ইউনিয়নের, ৪ নং ওয়াডের শালিখা গ্রামের, মন্ডলপাড়ার ৪২টি হিন্দু পরিবার আতঙ্কে কাটাচ্ছেন দিন। ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করে, ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সাবেক কমিটির ৬ জনকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন কমিটির সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে বাদ পড়ে যাওয়া ৬ জন চলমান বিএডিসি প্রকল্পের কাজ গাঁয়ের জোরে দফায় দফায় বন্ধ করে দেয়।
নতুন কমিটির পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তীব্র নিন্দাসহ সাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখার দাবি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের। আর প্রশাসনিক ভাবে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখার দাবি, সচেতন মহলের। এব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
বর্তমান কমিটির সদস্যরা বলছেন, শালিখা গ্রামের মন্ডল পাড়ায় আমরা ৪২ টি পরিবার বসবাস করি। স্থানীয় সুবিধাভোগী কৃষকরা আমাদেরকে বিশ্বাস করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সেচ পাম্পের ঘর, পাইপলাইন সবকিছুই আমাদের জমির উপরে নির্মাণ হবে।
৬ জন কমিটি থেকে বাদ পড়ার কারণে, তারা পরিবারসহ আমাদেরকে, নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে এবং বেশ কয়েকবার এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কাজে বাধা দেওয়ার জন্য শ্রমিক বসে থাকছে। অহেতুক শ্রমিকদেরকে টাকা দিতে হচ্ছে।
সেচ নীতিমালা বলছে, সেচ কমিটির কোন সদস্যর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে, তাহলে বছর অন্তর কমিটি পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে সেই নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, আব্দুর রাজ্জাক, গ্রামবাসী আব্দুস সোবাহান, আব্দুর রহিম, মো. রওশন, সাইফুল ইসলাম ও মো. আরিফ।
শালিখা মৌজার, খলিশাগাড়ি বিলের জমি মালিক, মো. মহির উদ্দিন, মো. খলিলুর রহমানসহ প্রায় ১০ জন কৃষক বলেন, “ইতিপূর্বে যে কমিটি ছিল, সেই কমিটির ৬ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অতীতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ হারে টাকা নিয়েছে। আমাদের ফসল উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে বেশি। এই বিলে তাদের অনেকেরই জমি নেই। বেশিরভাগ জমি মন্ডল পরিবারের। বর্তমান কমিটি, সরকার নির্ধারিত মূল্য নেবে বলে, আমরা বিশ্বাস করি।’’
অভিযুক্ত হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, আব্দুর রাজ্জাক‘এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, এ্রব্যপারে তিনি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে, যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
অভিযুক্ত আরিফ জানান, “হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলে সেচ কমিটিতে সদস্য হয়েছে। মুসলিমদেরকে রাখা হয়নি।’’ তার দাবি মুসলিমদেরকে এই সেচ কমিটিতে রাখতে হবে, নইলে কাজ আগেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবারও আমাদের বাদ দিয়ে করলে বন্ধ করে দিব। তিনি আরো বলেন, “এ বিষয়ে কোন সংবাদ প্রচার করবেন না, আপনাদের জন্য ব্যবস্থা আছে তাহলে। আর বিএডিসি এবং মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতিনিধি আসবেন, আমাদের মধ্যে বিষয়টা মীমাংসা হবে।’’
হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মোস্তাকুল রহমান চঞ্চল বলেন. “বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিকায়ন ও কৃষকের খরচ সাশ্রয় করতে, নানুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তারই একটি দৃষ্টান্ত এলএলপি সেচ প্রকল্প। এই সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে শালিখা গ্রামের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। অতি দ্রুত উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবো।’’
বিএডিসি সিংড়া উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী মো: মানিক রতন বলেন, ভূ- উপরস্থ পানি কৃষি কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে নন্দকুজা নদী পাড়ে মন্ডলপাড়ায় ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আবেদন করে। নিজস্ব জমি এবং সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হয়। চলমান সেই কাজে যদি বাধা প্রদান করা হয় তাহলে ইউএনও মহোদয়’এর পরামর্শ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি, “সুজিত ঘোষ বলেন,  আমরা সাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখতে চাই। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে সজাগ থাকার দাবি জানাই।’’
নাটোর জেলা জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী, অ্যাডভোকেট প্রসাদ কুমার তালুকদার বাচ্চা বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করি। সেই সাথে প্রশাসন বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’’
সিংড়া সেচ প্রকল্প কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাহমুদা খাতুন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি কেউ সরকারি কাজে বাধা দেয় তাহলে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button