স্বাস্থ্য

সর্দি-কাশি দীর্ঘায়িত হচ্ছে কেন?

মোহনা অনলাইন

বাংলাদেশে গত কিছুদিনে মানুষের মধ্যে হাঁচি, কাশি, সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হারও বেড়েছে। সাধারণ গরম থেকে ঠান্ডা কিংবা ঠান্ডা থেক গরম মৌসুমে প্রবেশের সময় এই ধরনের মৌসুমি ফ্লুতে মানুষ আক্রান্ত হয়।

আশির দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে মোট সাতটি ক্যাটাগরির ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং শীতের সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

অন্যদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া ফ্লু ও সর্দিজ্বরের উপসর্গ একই হওয়ায় এই দুই রোগের মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষা ছাড়া এ ক্ষেত্রে বোঝার উপায় নেই। তবে বছরব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ নজরদারি করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানটির গত জানুয়ারির মনিটরিং প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশের ১০টি বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা ৫০৬টি নমুনার মধ্যে কোনও প্রকার ফ্লুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এই সময়ে।

প্রতিষ্ঠানটির বছরব্যাপী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা করা ১১ হাজার ১৬৫ নমুনার মধ্যে মাত্র ৮ দশমিক ১১ শতাংশে বিভিন্ন ধরনের ফ্লু পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ এবং ‘বি’ সংক্রমণের হার বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে এ, বি, সি এবং ডি ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ এবং বি ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি শীতকালে মানুষের মধ্যে রোগের মৌসুমি মহামারি সৃষ্টি করে, জেটি ফ্লু মৌসুম হিসেবে পরিচিতি। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস হচ্ছে একমাত্র ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, যা ফ্লু মহামারি সৃষ্টি করতে পরিচিত।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, একটি মহামারি দেখা দিতে পারে, যখন একটি নতুন এবং ভিন্ন ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ ভাইরাস আবির্ভূত হয়, যা মানুষকে সংক্রমিত করে, মানুষের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং যার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধক্ষমতা খুব কম বা কোনও প্রতিরোধক্ষমতা নেই। ইনফ্লুয়েঞ্জা সি ভাইরাস সংক্রমণ সাধারণত হালকা অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং মানুষের মহামারি সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয় না। ইনফ্লুয়েঞ্জা ডি ভাইরাসগুলো প্রাথমিকভাবে গবাদিপশুসহ অন্যান্য প্রাণীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন,  আইইডিসিআর সারভেইলেন্স করে দেখেছে যে ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষের মধ্যে তা হয়। নতুন ধরনে দেখা যাচ্ছে যে সংক্রমণের পর আমাদের গলার সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। যার জন্য কাশি তৈরি হচ্ছে। আবার অনেকের আগে থেকে এলার্জি কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে। সুতরাং সুনির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন, কেন হচ্ছে।

যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে, সেটির নির্দিষ্ট নাম আমরা জানি না। এই ভাইরাস নিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো কাজ করে কিছু জানাতে পারবে আইইডিসিআর। তবে এই ভাইরাসের কারণেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে সর্দি-কাশি, বলেন তিনি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button