স্বাস্থ্য

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে

মোহনা অনলাইন

বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে ক্যানসার অন্যতম। সমগ্র বিশ্বে ক্যান্সারজনিত কারণে মৃত্যুতে প্রথম স্থানটি ফুসফুস ক্যান্সারের দখলে থাকলেও দ্বিতীয় স্থানটি বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের। কলোরেক্টাল ক্যান্সার (কোলন ক্যান্সার) বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগের নাম।

কলোরেক্টাল ক্যান্সার বলতে বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারকে বোঝানো হয়। এটি রেক্টাম কিংবা কোলন যেকোনো জায়গা থেকেই উৎপন্ন হতে পারে। উৎপত্তির ধরণ অনুসারে এদের নাম রেক্টাম বা কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকে। মূলত উভয় ক্যান্সারের ধরণ ও লক্ষণ প্রায় একই। সাধারণত বৃহদান্ত্রে পলিপ সৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগের সূচনা হয়।

ডা. মোয়াররফ হোসেন বলেন, কোলোরেক্টাল ক্যানসার মূলত উন্নত বিশ্বের রোগ। উন্নত বিশ্বে মানুষ ফাস্ট ফুডে বেশি অভ্যস্ত। নিয়মিত মলত্যাগ না হলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থাৎ মলাশয়ের মধ্যে মল যত বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হবে, কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বৃদ্ধি পাবে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্তের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর পর এর হার আরও অনেক বেড়ে যাবে। কারণ নতুন প্রজন্ম দিন দিন ফাস্ট ফুডের দিকে বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ–জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। এ রোগ থেকে দূরে থাকতে, বিশেষ করে প্যাকেজড বা স্মোকড ফুড না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা বলে জানান ডা. মোয়াররফ হোসেন।

কলোরেক্টাল ক্যান্সারের কারণ

১.পরিবারের কারো কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তা-ও ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বাবা-মা, সন্তান কিংবা ভাইবোনের কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে আশঙ্কা তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়।

২. বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ে কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি। ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের মাঝে এই রোগের হার বেশি। তবে ৫০ বা ৪০ এর কম বয়সীদের যে বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার দেখা যায় না তা কিন্তু নয়। তবে তা খুবই বিরল।

৩. গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস খান, কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদেরই বেশি থাকে। এ ধরনের মাংসকে বলা হয় রেড মিট বা লালমাংস। রেডমিটকে বা লালমাংস শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি উপাদান। এটি শুধু কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারই নয় বরং ওজন বৃদ্ধি, লিভার ক্যান্সার সহ আরো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ।

৪. শারীরিক কসরত বা পরিশ্রম না করলে কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

৫. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মাঝে কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রবণতা বেশি লক্ষণীয়। ডায়াবেটিস কতখানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেটাও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৬. অধিক ওজনসম্পন্ন কিংবা স্থূলকায় ব্যক্তিদের কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

৭. ব্যক্তির খাদ্যনালীর পলিপ বা কোলনের কোনো সমস্যার পূর্বতন ইতিহাস থাকলে তা কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৮. শুধুমাত্র ব্রংকাইটিস কিংবা ফুসফুসের ক্যান্সারই নয়, বরং ধূমপানে বাড়ে কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের)  ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের ঝুঁকিও।

৯. নিয়মিত খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, তেল চর্বি ও ভাজাপোড়া খাবারের আধিক্য এবং আঁশজাতীয় খাবার কম থাকলে তা খাদ্যের সঠিক হজম ও পরিপাকে গোলযোগ ঘটায়। বাড়ে পলিপ সহ কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে।

১০. রেডিয়েশন থেরাপি যেমন রোগ নির্ণয় সহ রোগীর বিভিন্ন জটিলতা সমাধানে কাজে লাগে তেমনি এর রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। যেমন রেডিয়েশন থেরাপি কলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্রের) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এ তো গেলো বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের জন্য দায়ী কারণ এবং ঝুঁকিগুলোর কথা। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

তবে কিছু ব্যাপার কোলোরেক্টাল (মলাশয় ও মলদ্বারের) ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে:

১. নিয়মিত কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে সাহায্য করে। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন রসুন, মাছ, মৌসুমী ফল ও শাকসবজির মতো খাবারগুলো।

২. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। আঁশ সমৃদ্ধ খাবার হজম ও পরিপাককে সুষ্ঠু করে ফলে বৃহদান্ত্র ও সুস্থ থাকে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা আপনাকে বহু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচাবে। বিশেষ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে আপনার কোলোরেক্টাল (মলাশয় ও মলদ্বারের) ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে যাবে।

৪. চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলাই উত্তম। কোলোরেক্টাল (মলাশয় ও মলদ্বারের) ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি হতে পারে দারুণ পদক্ষেপ।

৫. যেসব পশুর মাংসকে রেডমিট বলা হয় তা বহুলাংশে এড়িয়ে চলাই উত্তম। কেননা রেডমিট কোলোরেক্টাল (মলাশয় ও মলদ্বারের) ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহে তিনবারের চেয়েও কম এ ধরনের খাবার গ্রহণ করলে।

৬. অ্যালকোহল গ্রহণ এবং ধূমপান উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। চেষ্টা করা উচিত যতটুকু সম্ভব পরিত্যাগ করার।

৭. নিয়মিত হালকা শারীরিক পরিশ্রম কিংবা অনুশীলন কোলোরেক্টাল (মলাশয় ও মলদ্বারের) ক্যান্সার প্রতিরোধক। দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাও এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button