স্বাস্থ্য

লাল মাংসের বদলে সামুদ্রিক মাছে নির্ভরতা বছরে বাঁচাবে সাড়ে ৭ লাখ প্রাণ: গবেষণা

মোহনা অনলাইন

মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। নতুন একটি গবেষণায় এমনই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমিষের উৎস হিসেবে লাল মাংসের বদলে হেরিং, সার্ডিন এবং অ্যাঙ্কোভির মতো তৃণভোজী মাছের ওপর নির্ভরতা বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

রেড মিট বা লাল মাংসের ব্যবহার মানুষের রোগের উচ্চ ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও যে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ, তার সপক্ষে বিভিন্ন গবেষণায় আরও শক্ত প্রমাণ উঠে আসছে । বিপরীতে তৃণভোজী (প্ল্যাঙ্কটনভোজী) মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর, পরিবেশের বন্ধু এবং বিশ্বের মহাসাগরে এসব প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক ১৩০টিরও বেশি দেশের ডেটা বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা পেয়েছেন। এ ধরনের গবেষণায় এবারই সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা হয়েছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, লাল মাংস খাওয়ার বদলে মাছ খাওয়া হলে বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু রোধ করা যাবে। পাশাপাশি খাদ্য সম্পর্কিত রোগের ফলে সৃষ্ট শারীরিক অক্ষমতার প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যাবে।

এ ছাড়া এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে। কারণ এসব সামুদ্রিক মাছ সস্তা এবং প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় হৃদরোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে এটি উৎসাহিত করা যায় বলে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।

বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্য এবং পৃথিবীর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আমাদের লাল মাংসের ব্যবহার সীমিত করা উচিত। স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবারের দিকে নজর দেওয়া উচিত। লাল মাংসের সঙ্গে তুলনা করলে সামুদ্রিক মাছ কেবল প্রয়োজনীয় পুষ্টিই সরবরাহ করে না, এটি খাদ্য সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

গবেষকেরা বলছেন, তৃণভোজী মাছ ওমেগা-৩ লং-চেইন পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ। এ ধরনের খাবার হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করতে পারে, পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি১২ আছে এতে। আর খাদ্যের উৎস হিসেবে সবচেয়ে কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট রয়েছে এসব প্রজাতিতে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরা হয়, তার তিন-চতুর্থাংশই ফিশমিল এবং ফিশ অয়েল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এসবের আবার বেশির ভাগই ব্যবহার করা হয় বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য।

গবেষকেরা বিদ্যমান ডেটার ভিত্তিতে ২০৫০ সালে ১৩৭টি দেশে লাল মাংসের ব্যবহার এবং সামুদ্রিক মাছ ধরার প্রবণতা অনুমান করেছেন।

এই পদ্ধতিতে দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে ২০৫০ সাল নাগাদ খাদ্য-সম্পর্কিত রোগের কারণে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে। এ ছাড়া এ ধরনের রোগের কারণে অক্ষমতার জীবনযাপন এড়ানো যাবে ১ কোটি ৫০ লাখ বছর।

অবশ্য গবেষকেরা স্বীকার করেছেন, তৃণভোজী মাছের সীমিত সরবরাহ বর্তমান চাহিদার লাল মাংসকে প্রতিস্থাপন করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, অর্থাৎ লাল মাংসের বদলে মাছ খাওয়ার অভ্যাস করলে রোগের বৈশ্বিক বোঝা যথেষ্ট পরিমাণে কমানো সম্ভব।

গবেষকেরা বলছেন, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল লাল মাংসের একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হাজির করেছে। এই সমীক্ষা ভবিষ্যতে মাছ খাওয়ার প্রতি আরও মনোযোগ দিতে এবং মাছভিত্তিক খাদ্যনীতি প্রণয়ন এবং পুষ্টি সংবেদনশীল নীতিগুলোর প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button