পটুয়াখালীর দুমকির মেয়ে, রাজধানীর এক কলেজের শিক্ষার্থী, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করার পর আত্মহত্যা করেছেন।
পরিবারের অভিযোগ, ১৮ মার্চ ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই তিনি চরম মানসিক সংকটে ছিলেন। সামাজিক লজ্জা, চাপ ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ হয়ে পড়েন। অবশেষে এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে দাবি পরিবারের।
শনিবার রাত ১১টার দিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, “ঘটনাটি আমরা শুনেছি। নিহতের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।”
জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বি/৭০ নম্বর বাড়ির ভাড়া বাসায় নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দেন ওই ছাত্রী। পরে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত কলেজছাত্রীর চাচা জানান, রাত ১১টার দিকে ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পেয়ে তিনি দ্রুত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।
আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, “শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আত্মহত্যা। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুলিশ ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।”
ওই ছাত্রীর মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন এবং ১০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে তাকে দুমকির গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
ছাত্রীর মা বলেন, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়িতে ফেরার পথে তার মেয়েকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের সময় অভিযুক্তরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকার হুমকি দেয়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী মেয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে ২০ মার্চ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেদিন সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।
মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলার রাতেই এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকেও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোরের শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।



