Uncategorized

জাতীয় বাজেটে পোল্ট্রি খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চায় বিপিআইএ

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারে সহায়তার দাবি

২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পোল্ট্রি খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ)। সোমবার সংগঠনের সভাপতি শাহ হাবিবুল হক এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, “ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত, নিরাপদ প্রোটিন সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ভোক্তাবান্ধব বাজার ধরে রাখতে বাজেটে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

বিপিআইএ জানায়, দেশের পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই খাতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি জাতীয় জিডিপিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এই শিল্প।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে খাদ্য, বাচ্চা, ওষুধ ও ভ্যাকসিনের দাম বাড়ায় খামারিদের উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খামারিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন।

এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ) ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রথমত, সংগঠনটি পোল্ট্রি খাতে নিবন্ধিত খামারিদের জন্য সহজ শর্তে মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা চালুর প্রস্তাব করেছে। তারা চায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত লেয়ার ও ব্রয়লার খামারিদের জন্য প্রযুক্তি ক্রয় ও আধুনিকীকরণে নামমাত্র সুদে ঋণ প্রদান করা হোক, যা বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

দ্বিতীয়ভাবে, ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উৎপাদনপ্রবণ জেলাগুলোতে উন্নত ও আধুনিক সংরক্ষণাগার বা স্টোরেজ সিস্টেম গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। রমজান ও ঈদের সময় ডিমের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় খামারিরা অনেক সময় লোকসানে পড়েন। এই সমস্যা নিরসনে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

তৃতীয় দিকটি হলো বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ। বিপিআইএ’র দাবি, বর্তমানে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ রিবেট পাওয়ার নিয়ম থাকলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় খামারিরা সেই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। তাই ট্রেড লাইসেন্স, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধন ও বিপিআইএ’র পরিদর্শন রিপোর্টের ভিত্তিতে রিবেট প্রদানের বিষয়টি সহজ ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।

চতুর্থ প্রস্তাবে, ফড়িয়া ও মৌসুমি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমিয়ে খামারিদের জন্য সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে ‘পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার’ স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে। জেলার প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট স্থানে অবকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে এসব কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।

পঞ্চম প্রস্তাবনায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঢলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারে বাজেটে একটি বিশেষ থোক বরাদ্দ রাখার দাবি তোলা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা পুনরায় উৎপাদনে ফিরতে পারবেন এবং বাজারে প্রোটিন সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে না।

সবশেষে, সংগঠনটি পোল্ট্রি ফিড ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে এখনও বিদ্যমান কিছু উচ্চ শুল্ক হার পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে। যদিও এসআরও নং ২০৩ (২৯ মে ২০২৫) অনুযায়ী কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে, তবে আরও কিছু HS কোডে শুল্ক বহাল রয়েছে। এগুলো প্রত্যাহারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বিপিআইএ।

বিপিআইএ সভাপতি বলেন, “চরম চ্যালেঞ্জের মধ্যেও খামারিরা প্রতিদিন দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রোটিন সরবরাহ নিশ্চিত করছেন। তাই জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে বাজেটে এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button