খেলাধুলা

ব্রাজিলের ৭-১ ট্র্যাজেডির এক দশক

মোহনা অনলাইন

৮ জুলাই। এই তারিখটা ক্ষত হয়ে থাকবে ব্রাজিলের ফুটবলে। নিজেরা ভুলে যেতে চাইলেও প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকরা ঠিকই মনে করিয়ে দেন। কি হয়েছিল এদিন? বেলো হরিজোন্তের মিনেইরো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে জার্মানরা ব্রাজিলের জালে গুণে গুণে বল ঢুকিয়েছিল ৭ বার—ফুটবল ইতিহাসে যা ‘সেভেন-আপ’ নামে কুখ্যাত। দিনটি ছিল ৮ জুলাই, ২০১৪—যা আজও ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে এক দগদগে ক্ষত হিসেবে জেগে আছে।

সেদিনের সেই দুঃস্বপ্নের আগে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হিসেবে বিবেচিত হতো ১৯৫০ সালের ‘মারাকানাজো’। রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে দুই লাখ দর্শকের সামনে উরুগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। ৬৪ বছর পর মিনেইরো স্টেডিয়ামে সেই পরাজয়ের চেয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছিল সেলেসাওরা—ফুটবলবিশ্বে তখন থেকেই চলতে থাকে বিতর্ক, কোনটা বড় বিপর্যয়: ‘মারাকানাজো না মিনেইরাজো’?

সেদিনের জঘন্য হার আজও ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে যন্ত্রণার নাম হয়ে আছে। সেলেসাওদের প্রাণভোমরা নেইমারও আজও ভুলে যেতে পারেননি সেই ট্রমা। আর সেই ম্যাচে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর হরিজোন্তেরই ছেলে ও ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফ্রেড বলেছিলেন, “ম্যাচ শেষে মনে হয়েছিল আমি একটা গর্তে লুকিয়ে যাই, যেখান থেকে আর ফিরে না আসলেও চলে।”
কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারি, যিনি ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের রূপকার ছিলেন, তখন বলেছিলেন, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।” ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির উদ্দেশে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অধিনায়ক ডেভিড লুইজ।

জার্মান কোচ জোয়াকিম লো এক সাক্ষাৎকারে আজও সেই ম্যাচের কথা স্মরণ করে বলেন, “ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল সবসময়ই চাপের। ব্রাজিলও সেই চাপেই ছিল। ম্যাচের শুরুতে তারা ভালো খেলেছিল। কিন্তু ১১ মিনিটে (গোল করেন মুলার) গোল পাওয়ার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।” সেই ম্যাচে ক্লোসা, মুলার, ক্রুস ও ওজিলের দাপটে গোলের বন্যা বয়ে যায়।

জার্মান ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস ম্যাচ শেষে বলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। ব্রাজিলকে ছোট করে কিছু করতে চাইনি। খেলার ভেতরে থেকেও প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখানো দরকার।”
তবে কোচ জোয়াকিম লো পরে হামেলসের বক্তব্য নাকচ করে বলেন, “এটা ঠিক নয়। আমি খেলোয়াড়দের সতর্ক করেছিলাম, ফুটবলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। সুইডেনের বিপক্ষে বাছাইপর্বে যেমন ৪ গোল দিয়ে পরে ৪ গোল হজম করেছিলাম। তবে সত্যি বলতে, ব্রাজিলের জন্য খারাপ লাগছিল। কারণ, ২০০৬ সালে আমরা নিজেরাও ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে বাদ পড়ার কষ্ট জানি।”

সেই হারের ১১ বছর পরও বিশ্বমঞ্চে বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল। সর্বশেষ কোপা আমেরিকায়ও ফেভারিট হিসেবে নাম লিখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে তারা। উরুগুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে ছিটকে পড়ে দরিভাল জুনিয়রের দল।

বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সফল দেশ ব্রাজিল—তবে এ ইতিহাস আর পাল্টানো যাবে না। যতবার বিশ্বকাপের দরজায় কড়া নাড়বে সেলেসাওরা, ততবারই ফিরে আসবে মিনেইরাজোর সেই গল্প, সেই ভয়াবহ ট্রমা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button