বিশ্বজুড়ে অভিজাতদের রসনাতৃপ্তির এক অনন্য নাম ক্যাভিয়ার। স্টারজন প্রজাতির মাছের লবণ-সংরক্ষিত ডিমকে বলা হয় ক্যাভিয়ার, যা যুগের পর যুগ ধরে বিলাসবহুল খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। একে সাধারণত সরাসরি খাওয়া হয়, আবার অনেক সময় ডিপ বা সাজসজ্জার উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
প্রচলিতভাবে ‘ক্যাভিয়ার’ শব্দটি বোঝায় ক্যাস্পিয়ান ও কালো সাগর থেকে সংগৃহীত বন্য স্টারজন মাছের ডিম বিশেষ করে বেলুগা, ওসেট্রা ও সেভরুগা জাতের। যদিও আধুনিক যুগে এই শব্দটি বিভিন্ন ধরনের মাছের ডিম বোঝাতেও ব্যবহার হয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা CITES এটিকে ‘ক্যাভিয়ার বিকল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ‘ক্যাভিয়ার’ শব্দটি ইংরেজিতে আসে ফরাসি ও ইতালীয় ভাষা হয়ে, যার মূল উৎস তুর্কি শব্দ। রুশ ভাষায় একে বলা হয় ‘ইক্রা’, যা এক সময় ইংরেজিতেও ব্যবহৃত হতো।
১০ম শতকে আজভ সাগর থেকে সংগৃহীত স্টারজন মাছ ও এর ডিম বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও কিয়েভান রাসে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল। গ্রিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রুশরা শিখেছিল মাছের ডিম লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করার কৌশল। পরবর্তীতে মঙ্গোল আক্রমণের পর রাশিয়ার আস্ত্রাখান শহর হয়ে ওঠে ক্যাভিয়ার উৎপাদনের কেন্দ্র।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাভিয়ার আসে ৬০-১০০ বছর বয়সী অ্যালবিনো বেলুগা স্টারজন মাছের ডিম থেকে প্রস্তুত করা ইরানি ‘আলমাস’ ক্যাভিয়ার। এক কেজির দাম প্রায় ৩৪,৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। আর ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী সাধারণ স্টারজন ক্যাভিয়ারের প্রতি আউন্সের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৮০০ ডলার পর্যন্ত।
২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীন বছরে ১০০ টন ক্যাভিয়ার উৎপাদন করে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। দেশটিরKaluga Queen ব্র্যান্ড বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাভিয়ার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও রাশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উল্লেখযোগ্য ক্যাভিয়ার উৎপাদনকারী দেশ। অতীতে মাছকে হত্যা করে ডিম সংগ্রহ করা হতো। তবে এখন অনেক খামারে স্ট্রিপিং ও ম্যাসাজ পদ্ধতিতে মাছের জীবন রক্ষা করে ডিম আহরণ করা হয়, যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।



