সংবাদ সারাদেশ

১৪ দিনেই ধসে গেল পৌরসভার ৭ লাখ টাকার ড্রেন! 

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

কাঁচা বাজার ও মাছ মহলের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণের পৌরসভায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। সাত লাখ টাকা বরাদ্দের এই ড্রেনটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার দুই সপ্তাহ পরই এর বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় বাজারের দোকানিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার শ্রীপুর মাছ মহলের পশ্চিম পাশে।

স্থানীয় সূত্র ও বাজারের লোক মারফত জানা যায়, পৌরসভার রাজস্ব খাতের আওতায় ২৯০ ফুট ব্রিক ও ৮০ ফুট ঢালাইয়ের পাকা ড্রেন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল সাত লাখ টাকা। মধ্য বাজার, কাঁচা বাজার, গোশত মহল ও মাছ মহলের বিশাল অংশের পানি এই ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে পাশের গরু হাটের পশ্চিম দিক দিয়ে নালায় যাওয়ার কথা। গত মাসে এম আর কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তাকিম নামের একজন ঠিকাদার টেন্ডারের মাধ্যমে ওই কাজ শুরু করেন। গত দুই সপ্তাহ আগে ওই ড্রেনের ২৫৫ ফুট ব্রিক যার উচ্চতা ৪ ফুট (ডাকনা ছাড়া) এবং  প্রস্থ ৩ ফুট.৪ ইঞ্চি করা হয়। একই সাথে ৫৫ ফুট ঢালাইয়ের ড্রেনও করা হয়।

বাজারের লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গিয়ে দেখা যায়,মুরগী মহলের পশ্চিম দিকে ব্রিক সলিংয়ের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ে আছে। তারা জানায়, বুধবার দুপুরের দিকে ওই ড্রেনের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। নিম্নমানের কাজ করায় ওই দেয়ালের এক পাশ ধসে নিচে পড়ে গেছে। ফলে পুরো ড্রেনের নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে  আশপাশের দোকানীরা।

পাশের দোকানী সুরজ মিয়া জানায়, এক দিনের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের চাপ নিতে পারেনি সদ্য নির্মিত পাকা ড্রেন। কাজের সময়ই আমরা বলেছি, ভালো করে কাজ করেন কিন্তু ঠিকাদার আমাদের ধমক দিয়ে কাজ শেষ করেছে।

মুরগী ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, “হঠাৎ দেখি দোকানের পাশে পানি উঠেছে। পরে পেছনে গিয়ে দেখি ড্রেন ভাঙা। দীর্ঘদিন দুর্ভোগের পর সরকারি একটা ড্রেন দিছে। কিন্তু ১৫ দিন না যেতেই ধসে পড়লো, আমাদের কপালই খারাপ”।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক জানান, ড্রেনের পাশে শ্রীপুর বাজারের আব্দুর রশিদ ও ময়মনসিংহের পাগলা থানার মশাখালী এলাকার ফজলুল হক নামের দু’জন বহুতল ভবনের কাজ করছে। ভবনের টয়লেটের লাইন নবনির্মিত ওই ড্রেনের মধ্যে ফেলতে ঠিকাদার ও পৌরসভার কয়েকজনের সাথে গোপনে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে আঁতাত করে। পরে লাইন ড্রেনে দিয়ে কাঁচা ড্রেনের ওপর মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। এতে অতিরিক্ত লোডে ওই ড্রেনে চাপ পড়ে ভেঙে পড়েছে।

তবে, অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে আব্দুর রশিদ বলেন,” ড্রেন ভেঙে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আমরা টয়লেটের ময়লার লাইন দিয়েছে কিন্তু এতে তো কোনো ক্ষতি হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম আর কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তাকিমের মোবাইল নম্বরে একাধিক ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে রিসিভ করে তিনি কিছুই জানেননা বলে জানান। একপর্যায়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আগামীকাল দেখা করবেন বলে জানান।

এ নির্মাণকাজের নিয়মিত তদারকি করেছেন পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ  ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ প্রধান। বিষয়টি সম্পর্কে তাঁদের  মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহেদ আক্তার মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘ ড্রেন ধসে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন এমন হলো খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব “।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button