১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের করা বিচারাধীন মামলার পালাতক দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের মৃত হাবিল উদ্দিনের ছেলে মফিজ উদ্দিন (৭৫) ও মৃত মকছেদের ছেলে খেতাব (৮০)।
গ্রেফতারের পর অসুস্থ্য থাকায় খেতাবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শনিবার বিকেলে রাজশাহী জেলা পুলিশের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চারঘাট মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলার (মামলা নং-১৩ তারিখ- ০৯-৪-২০০৯ খ্রিঃ ধারা ৩০২/২০১/১০৯/৩৪) পেনাল কোর্ডের এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মফিজ উদ্দিন ও খেতাব দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তারা এলাকায় ফিরে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
মাসুদ হোসেন বলেন, এদের মধ্যে আটককৃত খেতাব এলাকায় কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে পরিচিত এবং ১৯৭১ সালে চারঘাট থানা এবং সংলগ্ন এলাকায় গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। তাদেরকে রাজশাহীর বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যানালে হস্তান্তর করা হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই মামলায় ছয়জন আসামি ছিলেন। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন এবং তিনজন পলাতক ছিলেন। পলাতক তিনজনের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখনো একজন পলাতক আছেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চারঘাট থানা এবং সংলগ্ন এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার খেতাব, মফিজ এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে এরা অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং নৃশংসভাবে মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করেছিল। এ সব ঘটনায় চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের শহীদ রওশন আলী সরকারের ছেলে গোলাম হোসেন বাদি হয়ে মামলা করেন।
মামলার বাদী চারঘাট থানার অভিযোগ করেন তার পিতা শহীদ রওশন আলী সরকার এবং রোস্তমপুর গ্রামের কলিম উদ্দিনকে এদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আটক করে বিবস্ত্র করে গাড়ির পিছনে বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এর পাশাপাশি বাদীসহ তাদের প্রতিবেশী অনেকের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন আরও বলেন, রাজশাহীতে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে ১৭টি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৩২ জনকে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫৩। পলাতক রয়েছে ২ জন। বাকিরা জামিনে ও একটি মামলায় সাজা হয়ে কারাগারে আছেন একজন।