দু’দিন আগেও বাংলাদেশের কাছে এই ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অনেক। তবে আফগানিস্তান ম্যাচে বড় জয়ে শুধু নিজেদের সুপার ফোরই নিশ্চিত করেনি সাকিব আল হাসানের দল, রশিদ-নবিদের সঙ্গে শঙ্কটে ফেলে দিয়েছে গ্রুপে থাকা অপর দল শ্রীলঙ্কার পরের রাউন্ডে ওঠা। এমন সমীকরণ নিয়ে এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গতকাল মাঠে নেমেছিল এই দুই দল। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগান বোলারদের উপর ঝড় তোলা কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করে শ্রীলঙ্কা। জিতলে তো বটেই ৩৭.১ ওভারের আগে নিজেদের হার এড়াতে পারলেই সুপার ফোরে খেলবে তারা। সে লক্ষ্যের খুব কাছে গিয়েও অল্পের জন্য পারল না আফগানিস্তান। জবাবে ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ রানে গুটিয়ে যায় নবি-শহিদীরা। রোমাঞ্চকর ম্যাচে ২ রানে হারিয়ে তাদের কাঁদিয়ে সুপার ফোরে উঠেছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচে দু’দফা সুযোগ পাওয়া আফগানিস্তান লড়াই করেছে শেষ অবধি। ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেছিলেন মুজিব উর রহমান। কিন্তু সরাসরি চলে যায় লংঅফে থাকা ফিল্ডার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। তবে তখনও সুযোগ ছিল তাদের। পরের তিন বলে একটি ছক্কা হাঁকাতে পারলে সুপার ফোরে উঠত তারাই। কিন্তু কোনো চেষ্টাই করলেন না ফজলহক ফারুকি। উল্টো তৃতীয় বলে আউট হয়েই গেলেন তিনি। সতীর্থের এমন নির্বোধ আচরণ অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিষ্পলক তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না আগের ওভারের শেষ তিন বলে তিন চারে যে আশা বাঁচিয়ে রাখা রশিদ খানের।
মুজিবকে আউট করার ঠিক পরের বলটি বেশ ছক্কা মারার মতো জুতসই একটি ফুলটস দিয়েছিলেন বোলার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু কোনো চেষ্টা না করে ডিফেন্স করেন ফারুকি। হয়তো ভেবেছিলেন আগেই সুযোগ শেষ হয়ে গেছে তাদের। এক বল পর এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। অথচ এর আগের ওভারে যখন ১৫ রানের প্রয়োজন ছিল, তখন তিনটি বাউন্ডারি তুলে আশার সঞ্চার করেছিলেন রশিদ। বিশেষকরে দুনিথ ওয়ালালাগের করা ৩৭তম ওভারের শেষ বলটি তখন ব্যাটে কানায় লেগে চলে যায় বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে, তখন মনে হয়েছিল ভাগ্য তাদের সঙ্গেই ছিল। কিন্তু এরপর ভাগ্য সঙ্গ দেয় লঙ্কানদের।
তবে লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরুটা ভালো হয়নি আফগানদের। কাসুন রাজিথার তোপে পড়ে দলীয় ২৭ রানেই বিদায় নেন দুই ওপেনার। বিপজ্জনক ব্যাটার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচে পরিণত করার পর আরেক ওপেনার ইব্রাহীম জাদরানকে বোল্ড করে দেন রাজিথা। তাতে কিছুটা চাপে পরে দলটি। তিন নম্বরে নামা গুলবাদিন নাইব অবশ্য শুরু থেকেই আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন। ১৬ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে পাথিরানার বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়লে থামে তার ইনিংস। এরপর রহমত শাহকে নিয়ে দলের হাল ধরেন হাসমতুল্লাহ। ৬৩ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। রহমতকে ফিরিয়ে এ জুটিও ভাঙেন রাজিথা। ৪০ বলে ৪৫ রান করেন এই ব্যাটার।
আফগানদের ইনিংসের গতিটা বাড়ে রহমত আউট হওয়ার পরই। উইকেটে নেমেই এক প্রান্তে ঝড় তুলতে থাকেন মোহাম্মদ নবি। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে খেলেন বিধ্বংসী এক ইনিংস। তাতেই স্বপ্ন দেখতে থাকে আফগানিস্তান। হাসমতুল্লাহর সঙ্গে ৪৭ বলে গড়েন ৮০ রানের জুটি। যেখানে হাসমত করেন ১৫ বলে ১১ রান। আরও বড় ক্ষতি করার আগে এই জুটি ভাঙেন থিকসানা। মিড উইকেট ও লংঅনের মাঝ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন নবি। ৩২ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন নবি। এরপর করিম জানাত নেমেও রানের গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেন। ১৩ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার সঙ্গে কিছুটা হাত খুলে খেলার চেষ্টা চালান হাসমতও। তবে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে এ দুই সেট ব্যাটারকে তুলে নেন ওয়ালালাগে। তাতেই ম্যাচে ফেরে লঙ্কানরা। এরপর নজিবুল্লাহ জাদরান ও রশিদ খানের চেষ্টাও রক্ষা করতে পারেনি তাদের। ৬৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৯ রান করেন হাসমত। নজিবুল্লাহ ২৩ ও রশিদ খান অপরাজিত ২৭ রান করেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৭৯ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান রাজিথা। ২টি করে শিকার ওয়ালালাগে ও ধনাঞ্জয়ার।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভালো সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। ৬৩ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও দিমুথ করুনারতেœ। এরপর হঠাৎ গুলবাদিন নাইবের তোপে পড়ে দলটি। ২৩ রানের ব্যবধানে এ দুই ওপেনার সহ সাদিরা সামারাবিক্রমাকেও ফেরান তিনি। তাতে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে লঙ্কানরা। এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে দলের হাল ধরেন কুশল মেন্ডিস। চতুর্থ উইকেটে ১০২ রানের জুটি গড়েন তারা। আসালাঙ্কাকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন রশিদ খান। নিজেই তার ক্যাচ লুফে নেন এই লেগস্পিনার। এরপর মেন্ডিসের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়ে মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে যান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে এক প্রান্ত ধরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে যান তিনি। তবে দুনিথ ওয়ালালাগে ও মহেশ থিকসানার ব্যাটে তিনশর কাছাকাছি পুঁজি পায় দলটি। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯২ রানের ইনিংস খেলেন মেন্ডিস। ৮৪ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। ৪১ রান করেন নিসাঙ্কা। আসালাঙ্কার ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান। শেষ দিকে ওয়ালালাগে ৩৩ ও থিকসানা হার না মানা ২৮ রানের দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেন। আফগানদের পক্ষে ৬০ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন গুলবাদিন। ২টি শিকার রশিদের।